নিউজ ডেস্ক: তার সংগ্রাম দৃষ্টি কেড়েছে দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশি মিডিয়ার। হতাশ হয়ে পড়া অনেক মানুষ পেয়েছে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। মায়ের কোলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা সেই হৃদয় সরকার অবশেষে নানা জটিলতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে মনোনয়ন পেলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আগামী ৬ ডিসেম্বর তিনি ভর্তি হবেন।
এর আগে কালের কণ্ঠের অবসরে পাতায় 'সীমা এক মায়ের নাম' শিরোনামে হৃদয়ের মাকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তার জীবনকাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। হৃদয় সরকারের মা সীমা রানী সরকার বিবিসির ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী মায়ের তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। কারণ তিনি প্রবল মানসিক জোরে দারিদ্র আর প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তার পঙ্গু ছেলেকে এমন উচ্চতায় এনে দিয়েছেন। 'সেরিব্রালপালসি'তে আক্রান্ত হৃদয় সরকার ছোটবেলা থেকেই হাটতে বা চলাফেরা করতে পারেন না।
সীমা সরকার গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন ছেলে হৃদয়কে কোলে করে নিয়ে যান পরীক্ষার হলে। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয় সরকার বাংলা অংশে ৯ দশমিক ৩০, ইংরেজি অংশে ১৪ দশমিক ৪০ ও সাধারণ জ্ঞান অংশে ২৭ দশমিক ৯০ নম্বরসহ মোট ১২০ দশমিক ৯৬ নম্বর পেয়ে ৩ হাজার ৭৪০তম হন ৷ প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির আবেদন করেছিলেন হৃদয় ৷কিন্তু এসময় দেখা দেয় বিপত্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী কোটার ফর্ম সংগ্রহ করতে গেলে তাকে জানানো হয়, তিনি ওই কোটার মধ্যে পড়েন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে প্রতিবন্ধী কোটায় শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী-এই তিন ধরণের প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে কোটা প্রযোজ্য হবে। এখানে শারীরিক বা অন্য কোন ধরণের প্রতিবন্ধীরা কোটায় ভর্তি হতে পারবেন না! অবিশ্বাস্য লড়াই করে এতদূর আসা হৃদয় এবং তার মা এমন খবরে খুব স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েন। এ সময় আবারও সরব হয়ে ওঠে মিডিয়া।
একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটার বিধিমালায় সংস্কার এনে শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও যুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি হয় হৃদয় সরকারের। এই অদম্য স্বপ্নযাত্রায় দারুণ সাফল্যের আরেকটি ধাপ অতিক্রম হলো আজ হৃদয় ও তার মায়ের। এর আগেই অবশ্য বিবিসির করা বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন সীমা সরকার। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মা-ছেলের অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের গল্প।