সোমবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৮:৪৯

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিমান ভুলে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাইছেন মনোনয়নবঞ্চিত শাহীন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিমান ভুলে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাইছেন মনোনয়নবঞ্চিত শাহীন

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অভিমান ভুলে ভোটের মাঠে নেমে পড়লেন ঢাকা-২ আসনের নেতা শাহীন আহমেদ। নিজের কর্মী বাহিনী নিয়ে এখন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাইছেন তিনি। অথচ এ ঘটনার কয়েকদিন আগেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌঁড়ে খুব এগিয়ে ছিলেন তিনি। 

জানা গেছে, এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে নতুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন শাহীন আহমেদ। এর পরও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নবঞ্চিত হন তিনি।

মনোনয়ন বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই আসনে কামরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে কামরাঙ্গীরচর, কেরানীগঞ্জ, আমিনবাজার, ভাকুর্তা, তেতুলঝোড়া এলাকার হাজার হাজার নেতাকর্মী ক্ষোভে মুষড়ে পড়েন। তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এর এক পর্যায়ে গত ২৬ নভেম্বর শাহীন আহমেদকে গণভবনে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একান্তে কথা বলেন শাহীনের সঙ্গে।

গণভবন সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে শাহীন আহমেদের মাথায় হাত বুলিয়ে নতুন আশা জাগিয়ে তোলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে যে কোনো সময় শাহীনের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় শাহীনও তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে দায়ের করা ২৯টি মামলার বিষয়টি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে বিগত পাঁচ বছরে খাদ্যমন্ত্রীর রোষাণলের শিকার হয়ে তার যে অগণিত নেতাকর্মী মামলা হামলার শিকার হয়ে এলাকাছাড়া- সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ বিষয়গুলোও তিনি দেখবেন বলে শাহীনকে আশ্বস্ত করেন।

এরপরই নতুন উদ্যমে ভোটের মাঠে নেমে পড়েন শাহীন আহমেদ। সবাইকে নতুন করে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাইতে যাচ্ছেন তিনি। একইসঙ্গে দলীয় মনোনিত প্রার্থী কামরুল ইসলামের সঙ্গে বসে পরামর্শ করে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে নানা পরিকল্পনাও করছেন তিনি।

এদিকে জানা গেছে, ঢাকার উপকণ্ঠ কামরাঙ্গীরচর, পাশ্ববর্তী উপজেলা কেরানীগঞ্জের সাতটি ইউনিয়ন এবং সাভারের আমিনবাজার, তেতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসন এক সময় ছিলো বিএনপির ঘাঁটি। এখানে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী হলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমান উল্লাহ আমান। জনপ্রিয়তার দিক থেকে আমান এখানে শক্তিশালী প্রার্থী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আমান উল্লাহ আমাদের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে জিততে হলে আওয়ামী লীগ জোটেরও দরকার ছিলো জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্রার্থী। সেদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। কারণ এলাকায় তিনি জনবিচ্ছিন্ন নেতা বলেই বেশি পরিচিত। মন্ত্রিত্ব পেয়েও এলাকার উন্নয়নে তিনি মনযোগী ছিলেন না। গুটিকয়েক নেতার পরামর্শ শুনে আওয়ামী লীগেরই অন্তপ্রাণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে রাখেন তিনি। শুধু তাই নয়, নানা কারণে আওয়ামী ঘরানার নেতাকর্মীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হন দল ক্ষমতায় থাকার পরেও।

এসব কারণে স্থানীয় সাংসদ খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় নেতাকর্মীদের। উন্নয়ন না হওয়া এবং বিগত সময়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় সাধারণ ভোটারেরাও মুখ ফিরিয়ে নেন কামরুলের দিক থেকে। এ সময় এগিয়ে আসেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। তিনি নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে এলাকার সাধারণ ভোটারদের হতাশা থেকে আলোকিত করে তোলেন। সেইসঙ্গে  মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে সবার মন জয় করেন তিনি। এর ফলে শাহীনকে ঘিরে তৈরি হয় নতুন সম্ভাবনা। একপর্যায়ে শাহীন শাহীন রব উঠে যায় পুরো ঢাকা-২ আসনে।

স্থানীয়দের মতে, বিএনপি জোটের আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো যথেষ্ঠ জ্বালানি রয়েছে শাহীনের। একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর আওয়ামী লীগেরই বিজয় অর্জন সম্ভব হতো। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকার নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার মুখ উজ্জ্বল করার মানসিকতায় মনোবল চাঙা করে ঘুরে দাঁড়ান শাহীন আহমেদ। একইসঙ্গে হতাশ নেতাকর্মীদেরও চাঙা করে তোলেন তিনি। নৌকা প্রতীককে জয়ী করার লক্ষ্যে সবাইকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনিও ।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে