নিউজ ডেস্ক: শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযান! অবশেষে র্যাব-পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর ৬ ঘণ্টার অভিযান শেষে আটক করা হয় সেই ঘাতক বাবাকে। এসময় উদ্ধার করা হয় মৃত এক এবং জীবিত আরেক শিশুকে। দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও যখন র্যাব-পুলিশ সফল হতে পারছিলেন না, তখন কাজে লাগানো হয় ওই বাবার সঙ্গে থাকা এক মৌলভীকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আজিম উদ্দীন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘরের ভেতর থাকা মৌলভীকে কাজে লাগিয়ে ওই বাবাকে কনভিন্স করা হয়। তাদের জানানো হয়, ‘আপনারা বাইরে বের হয়ে আসেন, জানাজার সব ব্যবস্থা করা হবে। পরে মৌলভীর সঙ্গে কথামতো জানাজার ব্যবস্থাও করা হয়। এরপর অপর ছেলে সাফায়াতকে নিয়ে নুরুজ্জামান বের হয়ে আসেন। আর ওই মৌলভী মৃত শিশুকে নিয়ে বের হন। এ সময় নুরুজ্জামানকে আটক করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আজিম উদ্দীন বলেন, ‘বাচ্চাটি মারা গেছে, না মেরে ফেলা হয়েছে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোনদের সঙ্গে নুরুজ্জামানের বহুদিনের দ্বন্দ্ব ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
প্রসঙ্গত, এর আগে সকালে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার একটি বাসায় সাফায়েত নামে তিন বছরের এক শিশুকে তার বাবা হত্যা করেছেন, এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে এলেও বাসার ভেতরে ঢুকতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কারণ ভেতরে মরদেহের পাশে ধারালো দা হাতে আরেক সন্তানকে বুকে নিয়ে বসেছিলেন শিশুটির বাবা নুরুজ্জামান কাজল। তিনিই কাউকে বাসায় ঢুকতে দেন নি। অন্যদিকে কাজলের ভাই নুরুল হুদা উজ্জ্বলের দাবি, শিশুটিকে তার বাবাই খুন করেছে।
শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান আরও জানান, শিশুর বাবা নুরুজ্জামান কাজল এর আগে মাদক গ্রহণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জেলেও পাঠানো হয় তাকে।
নুরুজ্জামান কাজল এর ভাই নুরুল হুদা উজ্জ্বল বলেন, কাজলের দুই সন্তান। একজন সাফায়েত, তার বড় আরেকজন আছে সুরায়েত। আমরা সাফায়েতের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। সকালে বাসায় ঢুকতে গিয়েও পারিনি। কাজলকে মাদকাসক্ত দাবি করে উজ্জ্বল বলেন, বাবাই খুন করেছেন সাফায়েতকে। কারণ কাজল মাদকাসক্ত। আর আমরা যখন বাসায় ঢুকতে গেছি, তখন কাজল আমাদের দিকে দা নিয়ে তেড়ে আসেন। সুরায়েত বাবার কাছেই আছে।
নুরুল হুদা উজ্জ্বল আরও জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কাজল বাসা থেকে বের হয়ে পাশে থাকা মাদ্রাসায় গিয়ে জানান, তার ছোট ছেলে নূর সাফায়েত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। এটা যেন মাইকে ঘোষণা করা হয়। তারপর মাদ্রাসার ছাত্রদের কোরআন খতম দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে চান। এ কথা শোনার পর আবদুল গাফফার নামে একজন খাদেম মাদ্রাসা থেকে তার সঙ্গে যান।
উদ্ধার অভিযানকালে র্যাবব-২ এর একটি টিম অংশ নেন। ওই টিমের এক কর্মকর্তা এসআই শহীদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমি ভেতরে ঢুকে দেখেছি, নুরুজ্জামান কাজল তার ছোট শিশুকে কাফনের কাপড় পরিয়ে টেবিলের ওপর রেখেছেন। এ ছাড়া বড় সন্তানকে বুকে জড়িয়ে হাতে বড় রামদা নিয়ে বসে আছেন।’
শিশুটির বাবাকে কোনো সাহায্য লাগবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাদের কারও সাহায্য লাগবে না। আপনারা কেন এসেছেন? আপনারা চলে যান। দুপুর ১টার দিকে আমি নিজে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে আমার ছেলেকে দাফন করব।’ বলেন র্যাবের এসআই শহীদুল ইসলাম।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ওই বাসার দোতলায় থাকেন কাজল। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাস খানেক আগে তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা আকিল জামান বলেন, কয়েক মাস আগে স্ত্রীকেও মারধর করেন কাজল। প্রতিবেশীরা এসে তার স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রী চলে গেছেন। বাচ্চা দুটো বাবার সঙ্গে ছিল।