নিউজ ডেস্ক: ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় গ্রেপ্তার শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনার (৫১) জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন সিএমএম আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে হাসনা হেনাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পরির্দশক কামরুল হাসান তালুকদার এ আসামিকে আদালতে হাজির করে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করার আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, মামলার ভিকটিম অরিত্রী অধিকারী (১৪) ভিকারুনসিনা নূন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। আসামি হাসনা হেনা তার শ্রেণি শিক্ষক।
অরিত্রী গত ২ ডিসেম্বর পরীক্ষা থাকায় প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে যায়। যাওয়ার সময় বাসায় ব্যবহৃত একটি মোবাইল নিয়ে যায়। পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষিক হাসনা হেনা মোবাইল পেয়ে নিয়ে নেয় এবং পরদিন বাবা-মাকে নিয়ে আসতে বলে। পরীক্ষা শেষে ভিকটিম বাসায় এসে বিস্তারিত জানালে পরদিন অরিত্রীকে নিয়ে বাবা-মা সকাল ১১টায় স্কুলে যায়। স্কুলে গিয়ে প্রথমে শ্রেণি শিক্ষক আসামি হাসনা হেনার নিকট গেলে তিনি তাদের অনেক সময় বসিয়ে রাখে পরে আসামি সহকারী প্রধান শিক্ষক ও শাখা প্রধান জিন্নাত আরার নিকট নিয়ে যায়। সেখানে জিন্নাত আরা তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং বাদীর মেয়েকে টিসি দেবেন বলে হুমকি দেন।
তখন তারা অরিত্রীকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আসামি নাজনীন ফেরদৌসের রুমে গিয়ে দেখা করেন। ওই সময় ভিকটিম অরিত্রী তার পা ধরে ক্ষমা প্রার্থণা করেন। বাদী ও তার স্ত্রী মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারাও ক্ষমা চান। কিন্তু আসামি কোনো কর্ণপাত করেননি। একটু পরে লক্ষ্য করেন মেয়ে অরিত্রী রুমে নেই। বাদী ও তার স্ত্রী বাইরে খোঁজা খুঁজি করে না পেয়ে বাসায় এসে রুমে দেখতে পান। এরপর বাদী কাজে চলে যান। কিছু সময় পর বাদীর স্ত্রী মোবাইলে জানায়, অরিত্রীর রুম বন্ধ, খুলছে না এবং সাড়া শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে বাসার কেয়াটেকার শুখদেব বাথরুমের ভেন্টিলিটার দিয়ে রুমে প্রবেশ করে অরিত্রীকে ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে দেখতে পেয়ে রুম খুলে দেয়। বাদীর স্ত্রীসহ আশপাশের লোকজন ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে বেলা ৩টার দিকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অরিত্রীকে মৃত্যুবলে ঘোষণা করেন।
উপরোক্ত ঘটনায় বাদীর স্পষ্ট ধারণা যে, স্কুলের উল্লেখিত শিক্ষকদের নির্মম আচরণে মর্মাহত হয়ে অরিত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আসামির নাম ঠিকানা যাচাই হয় নাই। জামিন দিয়ে পলাতক হয়ে মামলার তদন্ত বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। তাই তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক। রিমান্ড আবেদন না থাকায় সে আদালতের হাজতখানায় থাকাবস্থায় বেলা পৌনে ৪টার দিকে আদালতে এ আসামির পক্ষে আইনজীবী সন্ত্রাস বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জামিনের আবেদন করে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে হাসনা হেনা শিক্ষকতা করেন। এজাহার এবং প্রতিবেদনে তিনি অরিত্রীকে কোনো প্রকার প্ররোচনা দিয়েছেন, বকাঝকা করেছেন এমন কোনো বক্তব্য নেই। শুধু বলা হয়েছে অরিত্রী ও তার মা-বাবা আসার পর তিনি তাদের অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও শাখা প্রধান জিন্নাত আরার নিকট নিয়ে যায়। এর বাইরে একটি বক্তব্যও নেই। তাহলে কীভাবে তিনি প্ররোচনা দিলেন। যে শ্রেণি শিক্ষক আফসানা মোবাইল সিজ করলেন তাকেও এই মামলায় আসামি করা হয়নি। শুধু হয়রানি করার জন্য তাকে আসামি করা হয়েছে। তাই তিনি জামিন পেতে হকদার।
ওই সময় রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, ভিকারুননিসার এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা অভিভাবকসহ সকলকে নাড়া দিয়েছে। তারা শিক্ষকতার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। অরিত্রী যদি অন্যায় করেও থাকে তাদের উচিত ছিল তাকে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের জন্য একটি মেয়ে অকালে ঝরে গেল। ভিকারুননিসার পিনয় থেকে শিক্ষকরা কোন অভিভাবকের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে না। তাই এ আসামির জামিন মঞ্জুর করা সমীচিন হবে না। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।