ঢাকা: পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানির নাম শুনলে কার জিবে জল না আসে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে একশ্রেণির খাদ্য ব্যবসায়ী। একটি স্টলের সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা হয়েছে ‘হাজীর বিরিয়ানি’। এ নামের আগে ছোট করে লেখা রয়েছে ‘অরিজিনাল’। আরেকটি স্টলের সামনে সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা ‘হাজীর বিরিয়ানি ও কাবাব হাউজ’। তার পাশেই একটি স্টল বড় সাইনবোর্ডে লিখে রেখেছে ‘নান্না বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজ’।
পরিচয় গোপন করে এসব স্টলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘হাজীর বিরিয়ানি’ নাম ব্যবহার করা হলেও এর একটিও পুরান ঢাকার নামকরা আসল ‘হাজী বিরিয়ানি’ নয়। একই রকম যে স্টলটি ‘নান্না বিরিয়ানি’ লিখে রেখেছে সেটিও পুরান ঢাকার নামকরা ‘নান্না বিরিয়ানি’ নয়। মূলত নামকরা হাজী ও নান্না বিরিয়ানির নাম ভাঙিয়ে টাকা কামাতেই এ কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা।
এদিকে পুরান ঢাকার নামকরা দুটি বিরিয়ানি হাউসের নাম ব্যবহার করে ব্যবসা করলেও খাবারের দামের ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্তর ফারাক। বাণিজ্য মেলার বিরিয়ানির স্টলগুলোতে প্রকৃত মূল্যের দ্বিগুণ দাম রাখা হচ্ছে।
মেলার ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশের পর বাঁ দিকে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে বড় অক্ষরে লেখা হাজীর বিরিয়ানির সাইনবোর্ড। স্টলটিতে ঢুকে খাবারের দাম জানতে চাইলে এক কর্মী জানান, এক প্লেট (ফুল) মাটন কাচ্চির দাম ৩৫০ টাকা, আর হাফ নিলে ২০০ টাকা। চিকেন বিরিয়ানির দাম এক প্লেট (ফুল) ৩২০ টাকা, আর হাফ ১৮০ টাকা। এ ছাড়া পাওয়া যাবে ১০০ টাকা প্লেট চটপটি এবং ১২০ টাকা প্লেট ফুসকা।
খাবারের এত দাম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্টল নিতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। খরচের টাকা তো উঠাতে হবে। খাবার বেচে তো লোকসান করব না। এখানে এসেছি লাভ করতে।’
এরপর নান্না বিরিয়ানি লেখা স্টলের এক কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘নাম দিয়ে কী করবেন ভাই? খাবার খেয়ে দেখলেই বুঝবেন। পুরান ঢাকার নান্না বিরিয়ানির থেকে আমাদের খাবার কোনো অংশে কম নয়। বরং ওদের থেকে আমাদের খাবারের স্বাদ আরো বেশি।’
মেলার পশ্চিম দিকে রয়েছে হাজীর বিরিয়ানির আরেকটি স্টল। এ স্টলেরও একাধিক কর্মী স্বীকার করেছেন এটি পুরান ঢাকার আসল হাজী বিরিয়ানি নয়। হাজীর বিরিয়ানি থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়া মাহবুবুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘পুরান ঢাকার হাজী বিরিয়ানির সঙ্গে এ বিরিয়ানির কোনো মিল নেই। স্বাদে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। অথচ দাম রাখা হচ্ছে গলাকাটা।’
মেলায় দায়িত্ব পালন করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। প্রমাণ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’-কালের কণ্ঠ