নিউজ ডেস্ক: পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুন নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর দুইটি হেলিকপ্টার কাজ শুরু করেছে।
আগুন নেভাতে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে ৩টা ৪৮ মিনিটে পানি নিয়ে হেলিকপ্টার দুটি ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেয়। এরপর আকাশ থেকে পানি ছেটানো হয়।’
বিমান বাহিনীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার সঞ্জীব চৌধুরী সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন, পানি স্বল্পতার খবর পেয়ে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে চার গাড়ি পানি নিয়ে আসা হয়েছে। কাউকে উদ্ধার করার প্রয়োজন হলে কিংবা উপর থেকে পানি ছুড়তে হলে সেগুলো ব্যবহৃত হবে। তেজগাঁও বিমানঘাঁটিতে আরও চারটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রিজার্ভ পানি সরবরাহের জন্য বিমান বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান এই স্কোয়াড্রন লিডার।
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ জনে।
বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের অস্থায়ী তথ্যকেন্দ্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল জুলফিকার জানান, ভবনের ভেতরে আরও অনেক লাশ থাকতে পারে।
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ওই ভবনে বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও আবারও বেরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের চেষ্টায় আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক কর্মীসহ অনেকেই এখানে কাজ করছেন। নগরবাসী, দেশবাসী সবার দোয়া চাচ্ছি, যাতে করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, আগুন লাগার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৩৭টি ইউনিটের ২০০ শতাধিক ফায়ার ফাইটার্স কাজ করছে। এই জায়গাটা আসলে সুরু আমাদের পানির শঙ্কট হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল আছে। আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি।
আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত।
রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। হাজারো উৎসুক জনতা আশপাশ এলাকায় ভিড় করেছেন। হাজী ওয়াহেদ মিয়ার বাড়ির সামনের আরেকটি ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। থেমে থেমে বিকট শব্দ শোনা যায়। আশপাশের গ্যাস লাইনেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
এলাকাবাসী কারও কারও ভাষ্য, ওয়াহেদ মিয়ার বাড়িতে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। তাই আগুন লাগার পরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্য একজন জানান, ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে একটি ট্রান্সফরমার বিস্ম্ফোরিত হয়ে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এ সময় প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ম্ফোরিত হয়ে ভবনে আগুন লাগে। আগুনের পরপরই অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন।
স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। প্রতিটি হোটেলে ৪ থেকে ৬টি গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। একটি হোটেল থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। সরু অলিগলি হওয়ায় আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেগ পেতে হয়। চকবাজার থানার সামনে গাড়ি রেখে সেখান থেকেই পাইপের মাধ্যমে পানি নেওয়া হচ্ছিল।
চকবাজারের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে একটি হোটেলও রয়েছে। দ্রুত ট্রান্সফরমারে আগুন ধরে যায়।
স্থানীয়রা জানান, আগুন ছড়িয়ে পড়া ৫টি ভবনের প্রতিটির নিচে বিভিন্ন ধরনের দোকান, পারফিউমারি ও প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম রয়েছে। ওপরের তলাতে লোকজন বসবাস করেন। পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
রাতেই শত শত স্বেচ্ছাসেবী আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেন। অনেক ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীদের মালপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়। কেউ কেউ দোকানের সামনে পাহারা দিচ্ছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো এলাকায় ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহম্মদ খান ও ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউটসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তা করেন।
চকবাজার থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, আগুনের খবর পেয়ে একাধিক কর্মকর্তা সেখানে গেছেন। আগুন লাগা ভবনের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলে আহাজারি :আগুনে দগ্ধ ১৬ জনসহ ৫০ জনকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধিকাংশের হাত-পায়ে জখম ছিল। দগ্ধরা হলেন- রেজাউল, জাকির হোসেন সেলিম, আনোয়ার, মোস্তাফিজ, জাহিদুল, ইভান, মাহমুদ, রামিম, সালাউদ্দিন, মোজাফ্ফর হোসেন, সোহাগ, সোহান, ফজর আলী, হেলাল, সুজন। তাদের মধ্যে প্রথম দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
আহতরা হলেন- আলামিন, রিমন, সিয়াম, রেজাউল, বাবুল, শহিদ, শহিদুল্লাহ, আবদুল করিম, শামীমুর রহমান, সাইফুল, সালাউদ্দিন, মো. মাহমুদ, পীর মোহাম্মদ, কাউছার, সোহেল, পলাশ, জাহাঙ্গীর, আ. সালাম, রবিউল, মন্জুরুল আলম। রাতেই আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান স্থানীয় এমপি হাজী সেলিম।
মিটফোর্ড হাসপাতাল সূত্র জানায়, আগুনে দগ্ধ হয়ে ভর্তি চারজনের আবদুল মান্নান ও হেলাল উদ্দীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু হয়।।