নিউজ ডেস্ক: রাকিবুল হাসান। ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র। পুরান ঢাকার চকবাজারে গত বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া ওয়াহেদ ম্যানসনের তিন তলায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ড কয়েক গজ দূর থেকে দেখেছেন তিনি। সময় সংবাদকে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
রাকিব বলেন, ‘যখন ঘটনা ঘটে, তখন আমি বারান্দায় চেয়ারে বসে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলাম। রাস্তায় জ্যাম ছিলো। ওই সময় এখানে একটা পিকআপ আসে। হোটেলে সরবরাহ করার জন্য ১০-১২টা গ্যাস সিলিন্ডার ক্যারি করে নিয়ে আসে। তারা গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নামাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি সিলিন্ডার লিক হয়ে যায়। লিক হওয়ার আওয়াজটা আমি শুনি। কিছু একটা উপরে ওঠে যায়। ওটা আমি খেয়াল করতে পারি নাই।'
রাকিব জানান, বিকট শব্দে উপরে উঠে যাওয়া সিলিন্ডারটি নিচে পড়ে আগুন ধরে যায়।
তার ভাষায়, ‘বারান্দার গ্রিল দিয়ে তাকিয়ে দেখি পুরো স্থানটা আগুনে ময়দান। আগুন ছাড়া চোখে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। প্রচণ্ড শব্দে আমাদের পুরো বাড়ি কাঁপছিলো। আমার রুমে একটা টিভি ছিল, প্রচণ্ড আওয়াজে সেটা ফেটে যায়।’
রাকিব জানান, গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুনের সূত্রপাত। তবে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোডাউনে থাকা কেমিক্যালের কারণে। আর গোডাউন ছিল রাকিবদের বাসাতেই। বাড়িটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। আর বাড়িতে থাকা বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের কারণে আশপাশেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ সবকিছুর আগেই অক্ষত অবস্থায় পরিবার এবং বাড়িতে অবস্থান করা অন্যদের নিয়ে বের হয়ে যান রাকিব।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাকিব বলেন, ‘আমাদের বিল্ডিংয়ে পারফিউমের কেমিক্যাল গোডাউন ছিল। দ্বিতীয় তলাতেও ক্যামিকেলের গুদাম ছিল। তৃতীয় তলার এক ইউনিট গুডাউন। এছাড়াও আন্ডার গ্রাউন্ডে বড় ড্রাম ছিল। (ওয়াহিদ ম্যানসনে) বিল্ডিংয়ে পাশে একটা দোকান ছিল সেই দোকানেও ক্যামিকেল ছিল। আগুন লাগলে রাস্তায় জ্যামে যারা আটকে ছিলো তারা কোনদিকেই যেতে পারেনি। তারা সেখানেই পুড়ে মারা যায়।'
'ঘটনার সময় আমাদের বাসায় আমার ছোট বোন, মা ও চাচা ছিল। আমি মাকে বলি, বের হতে হবে। মা বলেন, বাবা কি ভূমিকম্প? আমি, বলি না, আগুন। কাউকে জুতা পড়ারও সময় দেয়নি। যখন আমি বাসার গেটে আসি তখন পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে মোবাইলের লাইট দিয়ে তাদেরকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে আসি। সাথে সাথে বাড়ির যত লোক ছিলো সকলে এক তলায় নেমে আসে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সবাই এখানেই অবস্থান করবে। কোথাও বের হবে না। আমি আর ড্রাইভার আঙ্কেল দু'জনে গেটে আসি। বাইরের গেটে এসে দেখি শুধু বাম পাশটা খোলা হয়েছে যাওয়ার মতো। ফিরে গিয়ে সবাইকে বললাম, আমরা এখানে থাকতো পারবো না। এখানে থাকলে আমরা কেমিক্যালের ধোঁয়ায় মারা যাবো। পরে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আমার আম্মু, ছোট বোনসহ সবাইকে এক এক করে বের করে নিয়ে আসি। বাড়িওয়ালার মাকে আমার চাচা এবং ড্রাইভার আঙ্কেল উঠিয়ে বের করে নিয়ে আসেন।'
রাকিব জানান, ওয়াহেদ ম্যানশন তৃতীয় তলা ছিল চার ইউনিটের। তার মধ্যে তিন ইউনিটে ভাড়া ছিল। একটাতে পারফিউমের গুডাউন ছিল এবং চতুর্থ তলাতে পারফিউম কসমেটিকের গোডাউন ছিলো। এই বাড়ির মালিক ওয়াহিদ সাহেবের দুই ছেলে। তৃতীয় তলা একজনের আন্ডারে ছিল। চতুর্থ তলা আরেকজনের আন্ডারে ছিল।
আমরা তৃতীয় তলার মালিক হাজী সোহেলের ভাড়াটিয়া ছিলাম। ওনার সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিল। ওনাকেও আমরা বের করেছি। উনি বের হয়ে রাস্তায় দিয়ে চলে যান। এরপর তিনদিনের মধ্যে ওনারদের কাউকে দেখি নাই।
সূত্র: সময়টিভি