মো. শফিকুল ইসলাম: খুলনা নড়াইল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করতে এসেছেন সোহাইব ফারাজী। সঙ্গে এসেছেন তার মামা। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকে চাকরি। অনেক বড় স্বপ্ন। কিন্তু যোগদান করতে এসেই সব দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। কারণ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন ফারাজী। ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সোহাইব ফারাজী ও তার মামা আসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনের অভ্যর্থনা কক্ষে। এসেই সেখানে দায়িত্বরত কর্মীদের কাছে বলেন, মতিঝিল শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুল কুদ্দুসের কাছে যাবেন। দায়িত্বরত কর্মীরা বলেন, ‘এ নামে কেউ নেই। আগেও ছিল না।’ তখন হাসিমাখা চেহারায় হঠাৎ হতাশার ছাপ পড়ল। এবার মামা বললেন, ‘স্যার, একটু ভালো করে দেখেন। আমার ভাগিনা আজকে চাকরিতে জয়েন করবে। আমাদের সে (ভুয়া আব্দুল কুদ্দুস) আসতে বলেছে।’ তখন দায়িত্বরত কর্মীরা তার কাছে কোনো কাগজ আছে কি-না জানতে চাইলে খামের ভেতর থেকে নিয়োগপত্রসহ কয়েকটি কাগজ দেখান। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন ফরাজী।
প্রতারিত হওয়া ফরাজী বলেন, চাকরি দেয়ার কথা বলে আমার গ্রামের ইমরান নামের একজন আব্দুল কুদ্দুসের কাছে নিয়ে যান। তারা গ্রামের বিভিন্ন লোককে টাকার বিনিময় চাকরি দিয়ে থাকে। তারা আমার ইন্টারভিউ নেন। এরপর চাকরি দেবে বলে আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চান। এরপর টাকা দিই। টাকার বিনিময় তারা আমাকে এই নিয়োগপত্র দেন। বলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগপত্র নিয়ে গেলেই চাকরি হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (প্রতারক চক্র) জানায়, নিয়োগের পর তিন মাস ট্রেনিং হবে। ট্রেনিংয়ের সময় বেতন দেয়া হবে ১৬ হাজার টাকা। এরপর প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা বেতন দেবে। আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে দেখি নিয়োগপত্রসহ সব কিছুই ভুয়া।’
ফরাজী বলেন, ‘আমার পরিবার অনেক কষ্ট করে ঋণ করে দুই লাখ টাকা দিয়েছে তাদের। সমস্যায় পড়ে গেলাম। এখন চাকরি তো হলোই না উল্টো ঋণ পরিশোধ করতে হবে।’
ফরাজীর মামা বলেন, কাগজ দেখে আমারও সন্দেহ হয়েছিল। তবে প্রতারক চক্র আমাদের বোকা বানিয়েছে। তারা কত ট্যালেন্ট তারা পুলিশ ভেরিফিকেশনও নকল করেছে। এরা গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে, তাদের ধরার কি কেউ নেই বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তার নিয়োগপত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা ভুয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নিয়োগ দিলে তা সার্কুলারের মাধ্যমে জানানো হয়। এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিস সহকারী, পিয়ন পদে লোক নেয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি কোনো বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়নি। এর মানে প্রতারক চক্র লোকটিকে বোকা বানিয়েছে।
‘কিছু প্রতারক চক্র সব সময় সক্রিয়। তারা গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। মানুষ একটু সচেতন হলে এসব প্রতারক চক্রের কাছ থেকে রক্ষা পায়। যেমন- এখন সব ধরনের সরকারি চাকরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হয়। এ ছাড়া একটু যাচাই-বাছাই করলেই কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা বোঝা যায়’, বলেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী প্রতারক আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ০১৬৩৬২৬৬৫৮৩ নম্বরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মহা-ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না। এটি দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।-জাগো নিউজ