মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগগামী রাস্তায় মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে দু'পাশেই চলাচলের রাস্তা ছোট হয়ে এসেছে। একসঙ্গে বেশি যানবাহন চলতে শুরু করলেই যানজট শুরু হয়। আজ (মঙ্গলবার) এ এলাকার সাপ্তাহিক ছুটির কারণেই কি-না রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা। দুপুর ১২টা। টিএসসি থেকে টুং টাং শব্দে বেল বাজিয়ে রিকশা, দ্রুত বেগে মোটরসাইকেল শাহবাগের দিকে ছুটে চলেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের গেটের বাইরে বসে থাকা আনুমানিক ৯-১০ বছর ও বছর চারেক বয়সী দুটি শিশুর দিকে সবার দৃষ্টি ও সঙ্গে সঙ্গে আহারে বলে আফসোস করতে দেখা গেল।
নয়-দশ বছর বয়সী মেয়েটি বুকে আগলে রেখে ঘুম পাড়াচ্ছে তার চার বছর বয়সী বোনটিকে। হাঁটুর ওপর মাথা রেখে একটি হাত ছোট বোনের মাথার নিচে বিছিয়ে দিয়েছে। আরেক হাতে তার ভিক্ষার থালা। পাশেই একটি ছেঁড়া কাপড়ের ব্যাগ। বড় বোনটির মাথা টাক, পুরো শরীরে খোসপাচড়ার দাগ। ছোট বোনটিকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে কখন যে বড় বোনটি ঘুমিয়ে পড়েছে তা নিজেও জানে না।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপাকালে বড় মেয়েটি জানাল তার নাম আকাশী। বাসা কামরাঙ্গীরচর। বাবা অসুস্থ ও বেকার। মা বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। সংসার চালাতে মাকে সহায়তা করতে প্রতিদিনই ছোট বোনটিকে নিয়ে হেঁটে শাহবাগ আসে। ঝড়-বৃষ্টিতে বোনকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ফুটপাতে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসে থাকে। পথচারীরা দয়া করে টাকা দেন। তবে আজ দুপুর পর্যন্ত কেউ একটি টাকাও সাহায্য দেননি বলে জানায়। শিশুটি বলে, সকাল থেকে যা টাকা সাহায্য পায় তা দিয়ে দুপুরের খাবার কিনে খায়। বাকি সারাদিনে যা পাওয়া যায় তা বাড়িতে মাকে দেয়।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জনৈক ব্যক্তি ২০ টাকা দিলে খুশিতে দু'চোখ চকচক করে ওঠে শিশুটির। পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে বোনকে দিয়েই সে দৌড় দেয়। লোকটি জানায়, সকালে না খেয়ে বাসা থেকে এসেছে। তাই টাকা পেয়ে ছোট বোনসহ তার জন্য ফুটপাতের দোকান থেকে আলুভর্তা, ডাল ও ভাত কিনে আনতে গেছে।-জাগো নিউজ