শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:১৬:৩৯

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেলেন অন্ধ রাফি, টাকার অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শংকা

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেলেন অন্ধ রাফি, টাকার অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শংকা

নিউজ ডেস্ক : অন্ধত্ব জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্যের অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন চট্রগ্রামের পটিয়ার সাইফুদ্দিন রাফি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় ১৫১ দশমিক ৭৫ মার্কস পেয়ে খ ইউনিটে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। আর এর মধ্যদিয়ে তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে চান চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার এই তরুণ। তবে তার পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শংকায় রয়েছে পরিবার। ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করতে মাসে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। এই টাকা কোথায় থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত তারা। চট্টগ্রাম প্রতিদিন থেকে নেয়া

এর আগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর রাফি তার অভিমত ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলে ছিলেন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে চান। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন তার।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন রাফি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়বো। সেই লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিই। পরীক্ষায় ১৫১ দশমিক ৭৫ মার্কস পেয়ে আমি পাস করেছি। এই ইউনিটে মেধা তালিকায় ১১শ’ ১৬তম হয়েছি। আমার কোটা আছে, তাই আশা করছি ইংরেজি বিষয়ে পড়তে পারবো।’

সাইফুদ্দিন রাফির বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে। তার বাবা ছিলেন পটিয়ার ইউনিয়ন কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাফি সবার ছোট। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই তার বাবা মারা গেলে সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরেন বড় বোন স্কুল শিক্ষিকা রিফাত আরা আঁখি।

ভাইয়ের সাফল্যে রিফাত আরা আঁখি বলেন,আমাদের স্বপ্ন ছিল রাফিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর। তার নিজেরও স্বপ্ন এটা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাফি ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি। আমাদের এখন একমাত্র চিন্তা তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। তার পড়ালেখার খরচ কীভাবে জোগাড় করবো সেটি নিয়ে আমরা এখন দুশ্চিন্তায় আছি।

আঁখি আরও জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এরপর শিক্ষকতা করে আমি যা পেতাম তা দিয়ে নুন আনতে পানতা ফুরিয়ে যায় এভাবেই সংসার চলতো। অনেক কষ্ট করে আমার ছোট ভাইবোনের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ছোট বোনটি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে বিভাগে পড়ে। তার পাশাপাশি এখন রাফিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা থেকে শুরু করে ঢাকায় মেসে রেখে পড়াশোনা করাতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। মাসে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা তাকে পড়ালেখার খরচ দিতে হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৩ বছর বয়সে চুন পড়ে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান সাইফুদ্দিন রাফি। তখন থেকেই অন্ধত্বকে সঙ্গী করে পথচলা শুরু তার। তবে এই অন্ধত্ব শিক্ষাজীবনে খুব একটা বাধা হতে পারেনি। উল্টো অন্ধত্বকে জয় করেই শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন রাফি। এইচএসসি পরীক্ষায়ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন; পেয়েছেন জিপিএ-৫। শুধু তাই নয়, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসিতেও রাফি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে