হালিমা আক্তার এ্যানী: করোনাভাইরাসের সং'ক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি চলছে। সাধারণ ছুটির সময় রাস্তাঘাট এখন পুরোই ফাঁকা। করোনা সং'ক্রমণ এড়াতে সবাই যাঁর যাঁর ঘরে অবস্থান করছেন। এমন অবস্থায় কাজ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষ।
আমার কথাই ধরা যাক। আমি একজন নবীন আইনজীবী। ঢাকায় আমি ভাড়া বাড়িতে থাকি। এটা বলতে কোনো লজ্জা নেই। এটাই বরং কঠিন বাস্তবতা। করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের উপার্জন আপাতত বন্ধ। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরো বাড়িভাড়া দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, এখন সবকিছু বন্ধ। আমরা একপ্রকার বেকার জীবন কাটাচ্ছি।
এখানে নবীন আইনজীবীদের কথা বলা হলেও শুধু তাঁরাই নন, কঠিন দুঃসময় পার করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মধ্যবিত্তরা। তাঁদের পক্ষেও এখন বাড়িভাড়া দেওয়া সম্ভব না। কিছু ক্ষেত্রে দু–একজন বাড়িওয়ালা ভাড়া মওকুফ করেছেন এই মহামারির সময়। তাঁরা ভাড়াটেদের পাশে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হলে ভালো।
এমন অবস্থায় চোখের সামনে দেখি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সন্তানের বাবার চোখে হতাশা। তাদের হতাশা একটাই, মাস শেষে বাড়ি ভাড়া কোথা থেকে আসবে? যেখানে অফিস-আদালত বন্ধ সেখানে টাকা আসার কথা নয়। কারণ, সবকিছুই বন্ধ। আর আমরা আইনজীবীরা তো চাকরিজীবী নই। মাস শেষে তাঁদের নির্ধারিত বেতনও নেই। তাঁদের ভরসা প্রতিদিনের কাজের ওপর, মামলার ওপর। কিন্তু বাড়িওয়ালারা মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে দু–এক মাসের ভাড়া না নিয়ে যদি শুধু যাবতীয় বিল পরিশোধের খরচ নেন, তাহলে ভালো হবে। এতে তাঁরা (বাড়ি/ফ্ল্যাটের মালিক) খুব বেশি বিপদে পড়বেন না। কিন্তু এটা না হলে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত ভাড়াটেদের খুব সমস্যা হবে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য। এটা অবশ্যই ভালো দিক। এতে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়বে না। সচল থাকবে নিম্নবিত্ত শ্রমিকের পরিবার। তাদের না খেয়ে থাকার অনিশ্চয়তা কেটে যাবে এই প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে। কিন্তু শুধু রপ্তানিমুখী শ্রমিকেরাই দেশের চালিকাশক্তি নন। সব শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং স্বাধীন পেশাজীবীরাও দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আয়ের মানুষদের খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিতরণ করছেন অনেকেই। এমন দুর্যোগের দিনে মানবতার স্বার্থে সবাইকে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে জানাচ্ছি। তবে মধ্যবিত্তদের বড় সমস্যা হচ্ছে তারা কারও কাছ থেকে কিছু নিতে পারে না, ঘরে খাবার না থাকলেও। এমন অবস্থায় ঢাকায় থাকা মধ্যবিত্তদের মাথার বড় বোঝা বাড়িভাড়া না নিয়ে, প্রয়োজনে শুধু বিল বাবদ আসা টাকা নিয়ে এ বোঝা হালকা করার বিষয়টি বাড়িওয়ালা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দেখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে সরকারি নির্দেশনাও দেওয়া যেতে পারে। সরকার প্রয়োজনে বাড়িওয়ালাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরে এই দু–এক মাসের ভাড়া সমন্বয় করে দিতে পারেন। মেগা প্রজেক্টগুলোতে যে ব্যয় হয়, তার একটা প্রজেক্টের টাকাও ব্যয় হবে না এই মানবিক উদ্যোগে।
এ লেখার কারণ হলো এপ্রিল চলে আসছে। তাই করোনাভাইরাসের প্র'কোপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যেন বাড়িভাড়া থেকে মুক্তি পায় এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ও নির্দেশনা কামনা করছি।
তবে সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আশায় বসে না থেকে দুর্যোগের সময় বাড়িওয়ালারা যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে মানবতার দিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি। মানুষ মানুষের জন্য, এ বিষয়টি যদি আমরা এখনো প্রমাণ করতে না পারি তাহলে আর কখন পারব?
লেখক: আইনজীবী, ঢাকা জজকোর্ট