নিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসকে জয় করেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ আলা মিয়া ওরফে কালা মিয়া। চিকিৎসকরা বলছেন, পুরান ঢাকার এই বৃদ্ধের সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা দেবে, সাহস জোগাবে। করোনা থেকেও যে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব-তার বড় উদাহরণ তিনি। প্রাণঘা'তী এই ভাইরাসের সঙ্গে দীর্ঘ ১৮ দিন ল'ড়াই করে জয়ী হলেও কালা মিয়া পরাজিত হয়েছেন তার পাষ- সন্তানদের কাছে। তাই তো হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলেও ফিরতে পারেননি নিজ গৃহে।
তার সন্তানেরা হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া দূরের কথা, খোঁজখবর পর্যন্ত নেননি। বৃদ্ধ আলা মিয়া ছাড়পত্র হাতে নিয়ে বাসায় ফিরতে অস্থির হয়ে উঠতেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতেন, এই বুঝি তাকে নিয়ে যেতে প্রাণপ্রিয় ছেলেরা এসেছে। ওয়ার্ড বয়দের জিজ্ঞাসা করতেন, তার ছেলেরা কি এসেছেন? মাথা নেড়ে জবাব দিতেন ওয়ার্ড বয়, না আসেনি কেউ তাকে নিতে। মাঝে মধ্যে উতলা হয়ে উঠতেন। বলতেন তিনি, আমাকে একটা গাড়িতে তুলে দাও তোমরা। আমি একাই চলে যেতে পারব। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে তাকে ছাড়েননি।
হাসপাতাল থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আলা মিয়ার ছেলেরা কোনো সহযোগিতা করেননি। একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন ধরাই বন্ধ করে দেন আলা মিয়ার ছেলেরা। জানা গেছে, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের বাসিন্দা আলা মিয়া। চলতি মাসের শুরুতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন মহানগর হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষার পর তার করোনা পজিটিভ আসে।
চিকিৎসার পর তিনি করোনা মুক্ত হন। পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে ফলাফল। দ্বিতীয়বার পরীক্ষাতেও নেগেটিভ ফলাফল আসে। ১৫ এপ্রিল তাকে রিলিজ দেওয়া হয়। তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবার খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালেই থাকতে হয় কালা মিয়াকে। অবশেষে গতকাল সকালে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন একাই। এ সময় হাসপাতাল থেকে একজন ওয়ার্ড বয়কে সঙ্গে দেওয়া হয়।
আলা মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়ার সঙ্গে দুই দফা যোগাযোগ করা হয়। প্রথমবার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে দ্বিতীয়বারে দেওয়া তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়। প্রথম দফায় বিকালে বাবুল মিয়া বলেন, তার বাবা চলে এসেছেন সকালে। সুস্থ আছেন। নাজিমউদ্দিন রোডে লকডাউন থাকায় তারা তাদের বাবার খোঁজখবর নিতে পারেননি। তাছাড়া তাদের মধ্যে আত'ঙ্ক কাজ করছিল করোনাক্রা'ন্ত বাবাকে নিয়ে। তবে তিনি অনুশোচনা করে বলেন, তাদের কাজটি ভালো হয়নি।
সন্ধ্যায় ফের যোগাযোগ করা হলে বাবুল মিয়া বলেন, তার বাবা কোথায় আছেন তিনি জানেন না। তিনি নিজেই হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জানান। তার বাবার অবস্থান তিনি বলতে পারেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সিহাব বলেন, ৮০ বছরের বৃদ্ধ করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সে সময় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। বয়স্ক হওয়ায় তার চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সবাইকে অবাক করে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ।