ঢাকা : ঢাকার একজন যৌ'নকর্মী মালিহা বলেছেন, আমার ছেলে এখনো কিছু খায়নি। তার জন্য দুটো রুটি কেনার জন্য কিছু টাকা ধা'র করেছি। রুটির দিকে তাকিয়ে আমার ছেলে হতা'শ হয়েছে। কিন্তু তাকে বলেছি, এখনো তো রুটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, দু'দিন পরে তুমি রুটিও পাবে না। সে কারণে দয়া করে এসব খেয়ে নাও।
গত মাসে যখন থেকে ঢাকায় লকডাউন শুরু হলো, তখন থেকে আমি আত'ঙ্কের মধ্যে আছি। আর এই পরি'স্থিতি খা'রাপের দিকে যাচ্ছে। খদ্দের পাওয়ার আশায় রাস্তায় যেতে পারছি না। সে কারণে টাকা এবং খাবার ছাড়াই জীবন পার করছি। রাস্তা একেবারে ফাঁকা, কোথাও খদ্দেরের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আমার পরিবারকে খাওয়ানোর মতো কিছু নেই।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় খুবই ছোট একটি ঘরে আমার স্বামী, ১২ বছরের ছেলে এবং শাশুড়িকে নিয়ে থাকি। এই এলাকাটি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এবং আমরা সবসময় মাথায় রাখি যে- আমরা যে কোনো সময় করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হতে পারি। এখানে সামাজিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখাটা ক'ঠিন। কারণ, অন্যদের সঙ্গে একই টয়লেট এবং রান্নাঘর ব্যবহার করতে হয় আমাদের।
আমার স্বামী একজন রিক্সাচালক। কিন্তু তিনিও এখন বেকার। কারণ, সব কাজ এখন স্থ'গিত। সে কারণে সব মিলিয়ে আমাদের কাছে টাকা নেই। একদিন সকালে এক বন্ধুর বাড়িতে ভাত খেয়েছি। কারণ, পরিবারের অন্যদের খাওয়ানোর পর আমার জন্য আর অবশিষ্ট ছিল না। আমার বাবা-মা ঢাকার বাইরে একটি গ্রামে বাস করে। আমি প্রতি মাসে তাদের হাত খরচের টাকা পাঠাই। কিন্তু এখন আমি দিতে পারছি না।
এর আগে আমার রোজগার ভালো ছিল। স্বামীর সঙ্গে মিলে পরিবারের দৈনিক চাহিদা পূরণ করতাম। একদিন আমার পরিবার থেকে টাকার ব্যাপারে বলেছিল। কিন্তু আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারিনি। আমি নিজের জন্যই ল'ড়ছি; আমি কিভাবে এখন তাদের দেখভাল করবো? লাইটহাউস পরিচালিত যৌ'ন স্বাস্থ্যবিষয়ক সেবাদানকারী ক্লিনিকে আমি নিয়মিত যাই এইচআইভি এইডস থেকে সুর'ক্ষিত থাকার জন্য।
লকডাউনের আগে সর্বশেষ সেখানে গেলে তারা আমাকে বলেছে, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে খদ্দের থেকে দূরে থাকতে। তারা আরো বলেছে, তার পরেও যদি বাইরে যেতে হয়, আমি যেন মাস্ক পরি, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি এবং নিজের হাত কখনো মুখে-নাকে ও চোখে না স্প'র্শ করি। সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশির ব্যাপারেও তারা সত'র্ক করেছে।
যদি আমার কনডমের দরকার হয়। তাহলে সাধারণত স্বাস্থ্যকর্মীকে ফোন করে সংগ্রহ করতে পারি। তবে কনডম নিয়ে আমি কী করব? কোনো কাজই তো নেই। যদি এই অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে। আমি জানি না যে কিভাবে বেঁচে থাকবো। সং'ক্র'মণের ঝুঁ'কি এড়াতে সমস্ত শারীরিক মেলামেশা সীমাবদ্ধ করে ভাইরাসটি আমার কাজটিই অসম্ভব করে দিয়েছে। ভাইরাসের চেয়েও আমি না খেয়ে মা'রা যাওয়ার ভ'য়ে আছি।
গত এক মাসে আমাদের পরিবারের কেউ মাছ কিংবা মাংস খাইনি। এভাবে আমরা কতদিন বাঁচবো? কোনো টাকা নেই, কোনো খাবার নেই। ক্ষু'ধা'র্ত অবস্থায় আমরা কোয়ারেন্টিনে আছি। আমাদের কি এখান থেকে নিয়ে গিয়ে বি'চ্ছি'ন্নভাবে হলেও কোথাও আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে? আমি জানি না যে কে আমাদের মা'রবে, হতে পারে এটা করোনা ভাইরাস কিংবা ক্ষু'ধার জ্বা'লা।
(করোনার প্রকো'পের কারণে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোর দ্বারা পরিচালিত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব'ন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও স্বল্পহারে কাজ করে যাচ্ছে। মালিহা (তার পরিচয় গোপন রাখার জন্য নাম পরিবর্তন করা হয়েছে) এর মতো, হাজার হাজার যৌ'নকর্মী ক'র্মহী'ন হয়ে ব্যা'পক ক'ষ্ট ও ক্ষু'ধা'র্ত অবস্থায় আছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের লক্ষ্য হচ্ছে যৌ'নকর্মীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার এই সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করা।) সূত্র : এশিয়া টাইমস