মঙ্গলবার, ০৯ জুন, ২০২০, ০৮:০৮:২৯

পারিশ্রমিক ছা'ড়াই মৃ'ত্যু ঝুঁ'কি নিয়ে দিনের পর দিন করোনা রোগীদের সে'বায় এক মাদরাসা শিক্ষার্থী

পারিশ্রমিক ছা'ড়াই মৃ'ত্যু ঝুঁ'কি নিয়ে দিনের পর দিন করোনা রোগীদের সে'বায় এক মাদরাসা শিক্ষার্থী

নিউজ ডেস্ক : জুনায়েদ আহসানের ডা'ক নাম জুনু। রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে কচুক্ষে'ত বাজারের উ'ল্টো পাশে বসবাস করা ডাক্তার মো. হাকিম শাহাব উদ্দিন এবং মোছা. সালমা বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। মানুষের সেবার জন্য তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বিডি আ'র্তসে'বা ফাউ'ন্ডেশন’ নামে একটি স্বে'চ্ছাসে'বী সং'গ'ঠন।

জানা যায়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রায় মাসব্যা'পী একটা'না দিন-রাতে করোনা রোগীদের সে'বা করে যাচ্ছেন। এ কাজে তার সাথে দেলোয়ার খান নামে আরো একজন স্বে'চ্ছাসে'বক রয়েছেন। দুই জন পা'লাক্র'মে কাজ করেন। একজন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা, আরেকজন জন রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। প্রতিদিন গ'ড়ে তারা ৭-৮টি ম'রদে'হ ম'র্গে নিতে স'হায়'তা করেন। এছাড়া রোগীদের অ'ক্সি'জেন লা'গা'নো, গরম পানি, খাবার-ফলমূ'ল এনে দেওয়াসহ বিভিন্ন সে'বা করেন তারা।

কওমি মাদরাসার ছাত্র জুনায়েদ আহসান বলেন, আমাদের একজন স্বে'চ্ছাসেব'ক বন্ধু শেখ ঈশান করোনা আ'ক্রা'ন্ত হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎ'সাধী'ন ছিলেন। তার কাছে আমি প্রায় আসতাম। তার কাছে একদিন জানতে চাই'লাম আচ্ছা আমরা শুনি হাসপাতালে রোগীদের জন্য অক্সি'জেন নেই, চিকি'ৎসা ঠি'কমত পায় না, সঠিক বাস্ত'বতা কী? তখন সে আমাকে বলে, অক্সি'জেন অনেক আছে। কিন্তু সেগুলো গেটের সামনে থাকে। অক্সি'জেনের দরকার হলে নিজেরটা নিজেই এনে লা'গা'তে হয়। বয়স্ক ও বেশি অসু'স্থ ব্যক্তিদের নিজেই অক্সি'জেন নিয়ে এসে লা'গা'নো সম্ভব না। 

আমি তাকে আরো জিজ্ঞেস করি আর কী কী সমস্যা? তখন সে বলে যেখানে নিজের পরিবার দূ'রে ঠে'লে দিচ্ছে, সেখানে ডাক্তার, নার্স এবং ওয়ার্ডবয়রা কতটা ভালবাসা দেখাবে! সেই কারণে করোনা রো'গীরা সঠিক সময়ে সঠিক সে'বা পায় না। তখন আমি তাকে হাসপাতালে স্বে'চ্ছাসেব'ক হিসেবে কাজ করার কথা বলি। তখন সে আমাকে বা'র'ণ করে। এরপর একদিন সে আমাকে কল দেয়, আমি গিয়ে দেখি সে চ'র'ম অসু'স্থ। ব'মি করছে বা'রবা'র। তার হাসপাতালের বেডের দুই পাশেই দুজন করোনা আ'ক্রা'ন্ত রো'গী মা'রা গেছেন। এভাবেই আমার সেই বন্ধু ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা দুইপাশে দুটি ম'রদে'হের মাঝখানে শু'য়ে ছিল। ভ'য়ে সে অনেক অসু'স্থ হয়ে পড়ে।

জুনায়েদ আহসান বলেন, তখন আমি ভাবলাম প'রিস্থি'তি যতটা ভ'য়ং'কর হোক, মৃ'ত্যু ঝুঁ'কি থাকলেও কাউকে না কাউকে তো এ'গিয়ে আসতেই হবে। আমি যেহেতু কওমি মাদরাসার ছাত্র তাই আমার বিশ্বাস পৃথিবী উ'ল্টে গেলেও আমার মৃ'ত্যু যখন, যেখানে এবং যেভাবে লেখা আছে, সেভাবেই হবে। তাহলে আমি কেন এই রো'গীদের সে'বা দিচ্ছি না? বাবা-মাকে বললাম, তারা কিছুতেই রা'জি না। অনেক বো'ঝা'নোর পর বাবা-মা একপ'র্যায়ে বা'ধ্য হয়ে যখন দেখলো আমাকে কিছুতেই থা'মাতে পারছে না, তখন তারা বলে, তুমি যখন যেতেই চাও, তাহলে আর কি করা যাও, তবে সা'বধা'নে থেকো।

এরপর তিনি কুর্মিটোলা হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। করোনা আ'ক্রা'ন্ত হয়ে কেউ মা'রা গেলে ম'রদে'হ ৭/৮ ঘণ্টা বেডে পড়ে থাকে। সেটা যেন না হয়, যত তা'ড়াতা'ড়ি সম্ভব সেই লা'শটাকে বে'ড থেকে স'রি'য়ে নিতে চান তিনি। করোনা টাকা পায়সা ছা'ড়াই এই কাজ করতে চান বলে জানান কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তিনি বলেন, আমি যেহেতু করোনা আ'ক্রা'ন্ত ও মা'রা যাওয়া রোগীদের নিয়ে কাজ করবো, ফলে আমার বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না, তাই আমাকে শুধু হাসপাতালে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন আমার কথায় রাজি হয়ে যায়। এভাবেই আমি এ কাজের সাথে যু'ক্ত হই। এখনো আমি লা'শ দ্রু'ত ম'র্গে বা ফ্রি'জে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।

তিনি করোনা রো'গীদেরও বিভিন্ন ধ'রনের সে'বা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে প্রতিদিন রাত ১২টায় হাসপাতালের ও'য়া'র্ডে গিয়ে দেখেন নতুন রো'গী যারা আসছে, তাদের কারও কিছু লাগবে কি-না, কারো অক্সি'জেন লাগবে কি-না, নতুন কোনো রো'গী এলে সে যদি বয়স্ক হয়, তার সাথে যদি কোনো লোক না থাকে তার মোবাইলে তার নাম্বারটা সে'ভ করে দেন তিনি এবং বলেন যত রাতই হোক যে কোনো প্রয়োজনে তাকে কল দিতে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিন রাতেই আমাকে কেউ না কেউ কল করে বলে তার অক্সি'জেন শেষ, তখন আমি দ্রু'ত তার অক্সি'জেন লা'গিয়ে দেই। কারও গরম পানি লা'গ'লে এ'নে দেই। অনেকের কাছে টাকা থাকে কিন্তু ফলমূল আ'নার লোক নাই। তাদের ফলমূল এ'নে দেই। যার যখন যেটা প্রয়োজন আমার সা'ধ্যে'র মধ্যে থাকা সবটু'কু দিয়ে চে'ষ্টা করি।

এই কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থী সবার উদ্দেশে বলেন, যারা করোনা আ'ক্রা'ন্ত হয়েছেন তাদের আমরা যেন অ'বহে'লা না করি। এটা একটা রো'গ। এই রো'গ যে কারো হতে পারে। যে আ'ক্রা'ন্ত হয়ে গেছেন তাকে আমরা যেন সে'বা যত্ন দিয়ে ভালো করে তু'লি। কারণ সে ভালো হয়ে ও'ঠ'লে তার দেওয়া প্লা'জ'মা থেকে আপনার পরিবারের কেউ ভালো হয়ে ও'ঠ'তে পারে।

মাদরাসা শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহসান স্বপ্ন দেখেন একদিন হাসপাতালের বেড থেকে তাকে একটা লা'শও না'মা'তে হবে না। হয়তো একদিন কোনো করোনা আ'ক্রা'ন্ত রো'গীর মৃ'ত্যুর খবর পাবে না। হাসপাতালে থাকবে না একজনও করোনা রোগী। সেদিন নিজের এই স্বে'চ্ছাশ্র'ম থেকে মু'ক্তি নিয়ে ফি'রে যাবেন নিজ বাড়িতে বাবা-মার কো'লে। 

করোনা মু'ক্ত হউক সারা বিশ্ব এটা সবারই চাওয়া। তবে জোনায়েদের চাওয়াতে যেন অন্যরকম এক মা'হা'ত্ম্য আছে। কারণ জোনায়েদের মতো আর সবাই স্বে'চ্ছাশ্র'মে কাজ করছেন না। করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে সে'বা দিচ্ছেন না। শুধু আশা করছেন, হয়তো কোনোদিন শুনব দেশে আর কোনো করোনা রো'গী পাওয়া যায়নি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে