নিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামা'রির এ দুঃ'সময়ে অর্থিক সং'কটে পড়ে রাজধানী ছাড়ছে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ। গত মার্চে দেশে সং'ক্রমণ শনা'ক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার ভাড়াটিয়া ঢাকা নগর ছেড়ে গেছে। অনেকে কম ভাড়ার বাড়িতে উঠছে। সং'ক্রমণের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় দু'র্যোগ কেটে গিয়ে কবে নাগাদ প'রিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বাড়িওয়ালারা। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার বাড়িওয়ালারা, যাঁরা শুধু বাড়িভাড়ার ওপর নির্ভরশীল তাঁরা ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটিয়া ধরে রাখার কৌশল নিয়েছেন। কোনো কোনো বাড়িওয়ালা কমিয়েছেন সার্ভিস চার্জ। অনেকে ভাড়া না কমিয়ে অপেক্ষা করছেন, ভাড়াটিয়া বাসা ছাড়ার নোটিশ দিলে কমাবেন।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুসারে, ঢাকা শহরে মোট বাড়ির সংখ্যা তিন লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে উত্তরে সব মিলিয়ে এক লাখ ২০ হাজার এবং দক্ষিণে এক লাখ ৫০ হাজার। দক্ষিণের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে (পুরনো পাঁচ ইউনিয়ন) বাড়ির সংখ্যা আরো ৭০ হাজার।
ঢাকায় ভাড়াটিয়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ভাড়াটিয়া পরিষদ। ওই পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, ‘আমাদের কাছে ভাড়াটিয়াদের যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে দেখা যায়, ঢাকা শহরে প্রায় এক কোটি ৩৬ লাখ পরিবার ভাড়া থাকে। কারোনার কারণে অর্থিক সং'কটে পড়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার পরিবার ঢাকা ছেড়েছে।’
মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার ২১০ নম্বর বাড়ির মালিক মতিউর রহমান। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত এই প্রকৌশলী আবাসনপ্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাড়ি করিয়েছেন। সেখানে তাঁর এখন পাঁচটি ফ্ল্যাট আছে। তাঁর আয় বলতে এই ফ্ল্যাটভাড়া। এরই মধ্যে মতিউর রহমান বাড়ির প্রহরীকে বলে দিয়েছেন যে কোনো ভাড়াটিয়া ভাড়া কম দিতে চাইলে যাতে আপত্তি না করেন। মতিউর রহমান বলেন, ‘বলতে গেলে গণহারে ঢাকা ছাড়ছে ভাড়াটিয়ারা। ভাড়ার আয়ে আমার সংসার চলে। ভাড়াটিয়া চলে গেলে চ'রমভাবে বিপ'দে পড়তে হবে। সে কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভাড়া কমিয়ে হলেও ভাড়াটিয়া ধরে রাখার।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাতুয়াইল এলাকায় ভাড়া থাকেন সুবীর দত্ত। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। করোনায় চাকরি যায়নি, তবে বেতন কমেছে। বর্তমানে আমি ১৭ হাজার টাকায় ভাড়া থাকি। বেতন কমার কারণে এই বাসা ছেড়ে আরো কমে ১২ হাজার টাকার মধ্যে বাসা খুঁ'জছিলাম। বাড়ির মালিককে নোটিশ দেওয়ার পর তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া ১৩ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তাই আর বাসা ছাড়িনি।’
মাতুয়াইল এলাকার কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান বাবুল বলেন, ‘করোনার প্রথম দিকে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালার মধ্যে ভাড়া নিয়ে বি'রোধের বেশ কিছু সালিস করতে হয়েছে। এখন খবর পাচ্ছি, বাড়িওয়ালারা স্বেচ্ছায় ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটিয়া ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।’
উত্তর সিটি করপোরেশনের পল্লবী এলাকার মোহাম্মাদ আলী নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের জন্য বেশ কিছু টিনশেড ঘর করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে আমি ঘরপ্রতি তিন হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছিলাম। বর্তমানে অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি। তার পরও বেশ কয়েকটি পরিবার বাসা ছেড়ে দিয়েছে। ওইগুলোতে আর নতুন ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না।’
উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কে ভাড়ায় বসবাস করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নুরুল আলম। গত মাসে তিনি বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালা তাঁর ভাড়া কমিয়েছেন চার হাজার টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মালিকরা আপাত কৌশল হিসেবে ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করে খিলগাঁও এলাকার একজন বাড়ির মালিক বলেন, এখন যাতে বাসা খালি না থাকে সে জন্য ভাড়া কমানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। অবস্থা স্বাভাবিক হলে আগের ভাড়ায় ফিরে যাবেন।