ঢাকা : রাজধানীতে প্রায় দশটি ছিনতাইকারী গ্রুপকে আশ্রয় দেওয়া এক দম্পতিকে খুঁজছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। দম্পতিটি ছিনতাইকারীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ ছিনতাইয়ের পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করেন। আবার যখন কোনও ছিনতাইকারী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় তখন তারা আইনজীবী ঠিক করে আইনি সহযোগিতাও দিয়ে থাকেন।
রাজধানীর মানিকনগরে বাস করা এই দম্পতির নাম মালা-ইয়াসিন। গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে রাজধানীর ছিনতাইকারী বড় বড় চক্রকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন এই মালা-ইয়াসিন দম্পতি। সম্প্রতি শাহবাগে জাসদ নেতা মো. হামিদুলকে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। তারা এই দম্পতির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছিলেন মালা-ইয়াসিন।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, মালার বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায়। ছোটবেলায় কারওয়ান বাজারে সবজি কুড়াতেন। পরে একপর্যায়ে নাট্যমঞ্চে চলে যান। সেখানেই তার বিয়ে হয়। কিন্তু সে সংসার বেশি দিন টেকেনি। প্রথম স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। এখন তৃতীয় স্বামীর সংসার করছেন মালা। এই স্বামীর নাম ইয়াসিন। ছিনতাইকারীরা সফলভাবে ছিনতাই করতে পারলে তাদের বাসায় ইয়াবার আসরও বসাতো।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি। এই দম্পতি শুধু ছিনতাইকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন না। ইয়াবা বেচাকেনার সঙ্গেও তারা জড়িত। রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা বিক্রি করে আসছেন তারা। গোয়েন্দা পুলিশ মালা-ইয়াসিনকে নজরদারিতে রেখেছে। যেকোনও সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে জাসদ নেতা মো. হামিদুল হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গত সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর উত্তর মুগদা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এডিসি মিশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম। হামিদুলকে গত শনিবার হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের সামনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো, সোহেল ওরফে এরাবিয়ান হোসেন, জাহিদ হোসেন, শুকুর আলী, শাকিল (২) ডুম্বাস ও সোহেল মিয়া।
এ সময় তাদের হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি চাকু, ১টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ছিনতাই করা মোবাইল ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, জাসদ নেতা হামিদুল ইসলাম ২৫ বছর ধরে সেগুনবাগিচার হাইকোর্ট এলাকায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় থাকতেন। এই হত্যার পিছনে ছিনতাই ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ছিনতাই বেড়েছে : গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা দিনে দিনে নতুন কৌশল নিয়েছে। বিভিন্ন নাম পরিচয়ে তারা ছিনতাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ছিনতাইকারীদের একটি অংশ পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ও দিচ্ছে। তল্লাশির নামে যাত্রীদের রিকশা বা গাড়ি থেকে নামিয়ে ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছে। কেউ বাধা দিলে তাকে আঘাত করে গুরুতর আহত করছে। এই আঘাতে অনেকে মারাও যাচ্ছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, করোনাকালে ছিনতাইসহ অনেক অপরাধই বৃদ্ধি পেয়েছে। ছিনতাই ডাকাতিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা টহল জোরদার করেছি। গত সপ্তাহে অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি। ছিনতাইসহ খুনের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিট পুলিশিং জোরদার করেছি।