চল্লিশোর্ধ্ব নারীরাই ছিল ওর টার্গেট। তবে যাদের স্বামী বিদেশে থাকেন এবং বিত্তশালী, তাদের প্রতি ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। নানা কৌশলে ওই সব নারীকে একপর্যায়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলত মো. বেলাল হোসেন নামের এই ব্যক্তি। দেখা করার কথা বলে গোপনে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে রাখত সে। পরবর্তী সময়ে এসব ছবি পাঠাত ওই ভুক্তভোগীদের ‘ফেসবুক’ মেসেঞ্জারে। দফায় দফায় তাদের কাছ থেকে আদায় করত মোটা অঙ্কের অর্থ। অবশেষে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে বেলালকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসতে থাকে থলের বিড়াল। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত শতাধিক নারীর সঙ্গে সে এমন প্রতারণা করেছে বলে স্বীকার করেছে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে। পরে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে বেলালকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ডিবি সূত্র বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেই তাদের সন্ধান করত সে। দফায় দফায় মেসেঞ্জারে নক করে একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করত। বেলালের থাবা থেকে বাদ যায়নি তার শ্বশুরবাড়ির দিকের অনেক আত্মীয়।
এসব নারীর অনেককে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে সে। তবে এসব দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে রাখার কারণে এ ব্যাপারে তারা মুখ খুলতে সাহস পাননি। উল্টো তার ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। বিভিন্ন সময় দিয়েছেন বেলালের চাহিদা মতো অর্থ। সূত্র আরও বলছে, বেলাল পেশায় গাড়িচালক হলেও নিজেকে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী, বিত্তশালী বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে পরিচয় দিত। দেড় বছর ধরে এনা পরিবহনের গাড়ি চালাচ্ছে সে। করোনা মহামারীতে লকডাউনের সময় বেপরোয়া হয়ে পড়ে বেলাল। কৌশল হিসেবে কখনো কখনো সে নিজেকে স্ত্রীর দ্বারা প্রতারিত স্বামী বলে ওই সব ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করত। তাদের সঙ্গে দেখা করতে যেত রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। তার বাবার নাম আবদুল আজিজ। গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলা থানার গোয়াবাড়িয়ায়। গ্রেফতারের সময় বেলালের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনে তার অপরাধের অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মতিঝিল) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে বেলাল যে একজন বিকৃত রুচির মানুষ তা ইতিমধ্যে আমরা বুঝতে পেরেছি। কোন কোন হোটেলে নিয়ে ভুক্তভোগীদের ব্ল্যাকমেইল করত সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।