নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে পার্টিতে মদপানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নেহাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
ঘটনার পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) রাতে রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে নেহাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নেহার ফোন থেকে পাওয়া নানা ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশের দাবি, রাজধানীতে নিয়মিত পার্টির আয়োজন করতেন মারা যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ও তার বন্ধুরা। পার্টি আয়োজন এবং এতে অংশগ্রহণ করাই ছিল নেহা ও তার বন্ধুদের এক ধরনের পেশা।
নেহার ফোনে দেখা গেছে- বিভিন্ন স্থানে পার্টি করার ভিডিও চিত্র এবং সেলফি তোলা ছবি। ৩০ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় যে পার্টি হয় তার আয়োজকও ছিল নেহা ও আরাফাত। ওই রাতের পার্টির ছবি এবং গাড়িতে ফেরার ভিডিও পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর সঙ্গে গ্রেপ্তার রায়হানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার রাতে দু'জনের শারীরিক সম্পর্কও হয়। আর বিষাক্ত মদপানেই ওই ছাত্রী ও আরাফাতের মৃত্যু হতে পারে।
নেহা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছে, গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে গিয়ে আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। সেখানে আমি মদপান করি। ৩ পেগ পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমিও হয়। আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই। বাসায় যাওয়ার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।
ওই ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনায় করা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দেবে। এদিকে, নেহা গ্রেপ্তারের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ভিসি) হারুন-অর-রশিদ।
এসময় তিনি জানান, গ্রেপ্তার নেহা এজাহারভুক্ত আসামি। নেহা ও আরাফাত ওই দিন রাতে পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে বিষাক্ত মদ পানেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যু হয়। তারা নিয়মিত রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টির আয়োজন করতেন এবং নাচতেন বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। আরাফাত অতিরিক্ত মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ জানুয়ারি মারা যান।
আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসির আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন শাফায়াত জামিল (২২)। আদালতে হলফনামা দিয়ে মামলায় সম্পৃক্ততার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শাফায়াত। বিচারক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই মামলায় ৩১ জানুয়ারি মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসীরের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ওইদিনই চারজনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছিলেন মারা যাওয়া ছাত্রীর বাবা। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো একজনকে আসামি করা হয়।
জানা যায়, ২৮ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় মর্তুজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আরাফাতের বাসায় যান। সেখান থেকে আরাফাত, ওই তরুণী এবং রায়হান উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা এবং একজন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসামিরা ওই তরুণীকে ‘অধিক মাত্রায়’ মদপান করান। একপর্যায়ে তরুণী অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে তার এক বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নুহাত আলম তাফসীরের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তরুণীকে ধর্ষণ করেন রায়হান। রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খানকে ফোন দেন। সেই বন্ধু পরদিন এসে ওই তরুণীকে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মৃত্যু হয় তরুণীর।