মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলায়ও মশারির ভেতরে তিনি। তবুও যেন রেহাই নেই। মশারির ভেতরেও দু-একটি মশা। হুটহাট সেগুলো কামড় মারছে। কামড়ে শোয়া থেকে তিনি ছটফট করে উঠে যাচ্ছেন। ভেতরে থাকা মশা খুঁজে খুঁজে মারছেন।
শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকায় মশার উপদ্রব ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ভাড়াটিয়া পরিষদ ‘আধা ইঞ্চি মশা মারতে মেয়ররা ব্যর্থ’ শিরোনামে মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে ঢাকায় বেড়ে যাওয়া মশার অত্যাচার প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আগে থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় নগরবাসী মশার ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মানববন্ধনে ভাড়াটিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, রাজধানীতে মশার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় চারগুণ। প্রতিবছর ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মশা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেয়ার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, চিকুনগুনিয়ায় ২০১৯ সালে চার হাজার ৪৫৮ জন এবং ২০২০ সালে ৫২৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে দুই হাজার ৩৬০ জন এবং ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৮৬ জন। আর ম্যালেরিয়ায় ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছে দুই হাজার ৯৮ জন এবং ২০২০ সালে ৬৫৫ জন।
রাজধানীর মশার উপদ্রবের বিষয়ে সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘বর্তমানে রাজধানীতে মশার উপদ্রব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বস্তি থেকে অভিজাত এলাকা, সর্বত্রই এখন মশার আক্রমণ। এ যেন মানুষের নয়, মশার রাজধানী। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ওষুধ পুরো কার্যকর হচ্ছে না। এছাড়া নগরীর খাল, নালা পরিষ্কার না করায় বেড়েছে মশার প্রজননস্থল। মশার প্রকোপ এত বেশি যে মশারি, কয়েক আর স্প্রেও কোনো কাজে আসছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকার মশককর্মীদের দায়িত্বের অবহেলার ফল এখন মানুষ ভোগ করছে। তারা সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ অনুযায়ী বাসাবাড়ির আঙিনা, জলাশয়, ডোবা ও ড্রেনে ওষুধ ছিটালে মশার বিস্তার ঘটত না। বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। এছাড়া মশা যেহেতু জলাশয়ে বেশি বংশবিস্তার করে সেক্ষেত্রে সেখানে কীটনাশক স্প্রে করে মশার লার্ভা নষ্ট করতে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব।’
রাজধানীর বাড়িওয়ালাদের উদ্দেশে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘ভাড়াটিয়াদের অভিভাবক হিসেবে আপনাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আপনারা স্ব-উদ্যোগে আপনাদের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং মশকনিধনকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এতে করে ভাড়াটিয়াদের সাথে সাথে আপনাদের পরিবারও সুরক্ষিত থাকবে।’-জাগো নিউজ