নিউজ ডেস্ক: দূরপাল্লার গণপরিবহণ চলাচল বন্ধের মধ্যেও রাজধানী ছেড়ে গেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। বুধবার থেকে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে। এর আগেই সোমবার রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে বিভিন্ন জেলাগামী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিকল্প যানবাহন মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ট্রাক, পিকাপ ও মোটরসাইকেলে চড়ে ঝুঁকি নিয়েই নিজ গন্তব্যে গেছেন এসব মানুষ। সাধারণ সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল এলাকার সড়কে শত শত যাত্রী গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক মিনি ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল যাত্রী তুলছেন। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও গন্তব্যের উদ্দেশে এসব ছোট যানবাহনে চেপে যাচ্ছেন যাত্রীরা। বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের কেউ দিনমজুর, কেউ স্বল্প বেতনের কর্মজীবী ও বিভিন্ন পেশায় জড়িত নিন্ম আয়ের মানুষ। সর্বাত্মক লকডাউনে তাদের কাজও থাকবে না-এ কারণেই গ্রামের বাড়ি ছুটছেন। তাদের আশঙ্কা এ লকডাউনের সময় আরও বাড়তে পারে। ওই সময়টা পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে চান।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার উত্তর চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে তার অফিস (ট্রাভেল এজেন্সি) বন্ধ করে দিয়েছে মালিক। মার্চ মাসের বেতনও দেননি। কবে অফিস খুলবে সেটাও জানাননি। এ অবস্থায় ঢাকায় থাকা সম্ভব নয়। তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি। তিনি বলেন, গ্রামে ধান উঠতেছে। সেখানে কাজ করে পরিবার চালাব।
গাবতলী টার্মিনাল এলাকার প্রধান সড়কের ওপর গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সারওয়ার-মনিকা দম্পতি। সঙ্গে ছিল তাদের শিশু কন্যা মনোয়ার। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি না পাওয়ায় তাদের মুখে চরম হতাশ ও বিরক্তি দেখা গেছে। এ সময় সারওয়ার হোসেন বলেন, অফিস বন্ধ। বেতনও হবে না। এ সময় ঢাকায় থাকা কঠিন ব্যাপার হবে। এজন্য বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় কিভাবে যাব সেটা বুঝতে পারছি না।
আরও দেখা গেছে, সোমবার বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হাজার হাজার লোকের মিছিল ছিল পাটুরিয়া ও মাওয়া ফেরি ঘাটে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় ফেরিতে চড়ে এসব মানুষকে পার হতে দেখা গেছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের এ যাত্রায় নাকাল হতে দেখা গেছে। অসুস্থ অনেক মানুষকেও ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। পথে পথে গাড়ি পাল্টে মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ মাড়াতে দেখা গেছে।
এদিকে ‘লকডাউন’ চলাসত্ত্বেও এদিন সকালে ঢাকার রাস্তায় যানজটের চিরচেনা রূপ দেখা গেছে। ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, মিরপুর রোড, কাওরান বাজার, পান্থপথ, পল্টন, বাংলামোটর, গুলশান, উত্তরা, কুড়িল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মিরপুরসহ অন্য সড়কে তীব্র যানজট এবং উপচেপড়া ভিড় ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বাদল হোসেন বলেন, ‘বনশ্রীর বাসা থেকে সোমবার রওনা হয়ে দুই ঘণ্টায় বারিধারায় পৌঁছাই। এটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি বলে মনে হয়েছে।’ রামপুরা, বাড্ডা ও নতুন বাজার এলাকায় তীব্র যানজট ছিল। হাজারীবাগের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, গণপরিবহণে সোমবার প্রচুর মানুষ চলাচল করেছে। যাত্রীর সংখ্যা বাড়ায় মানুষ সামাজিক দূরত্ব, সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে বেখেয়াল হয়ে পড়ে। বাসগুলো সিটে বসিয়ে যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাত্রী নিয়েছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে মানুষের হয়রানি ও অর্থদণ্ড ছাড়া তেমন কোনো সুবিধা হয়নি। একই চিত্র ছিল হাট-বাজারে। ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র কবলে পড়ার আশঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দেখা গেছে অনেককে।