মুন্সিগঞ্জ: তাহমিনা, রুবিনা ও হেলেনা বেগমের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে থাকতেন রাজধানীর আটিবাজার এলাকায়। তাহমিনা বেগম কাজ করতেন গার্মেন্টসে, হেলেনা বেগম ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করানোর জন্য এসেছিলেন ঢাকায় আর গৃহিণী রুবিনা বেগম ঢাকায় থাকতেন গাড়িচালক স্বামীর সাথে।
করোনায় গত এক বছরের বেশি সময়ে চালু হয়নি হেলেনা বেগমের সন্তানদের বিদ্যালয়। আর নতুন করে লকডাউনে তাহমিনা বেগমের গার্মেন্টস আর রুবিনা বেগমের স্বামীর কর্মস্থল আবারও বন্ধ। আয়ের পথ না থাকায় ব্যয় করার সামর্থ্য নেই তাদের। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের তিনজনকেই।
সোমবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে এই তিন নারীর সাথে কথা হলে এমনটিই জানান তারা। শুধু এই তিনজনই নয়, এদিন সরজমিনে ঘাট এলাকায় দেখা যায় ঢাকার জীবন গুছিয়ে স্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে ডজন খানেক পরিবার। করোনায় কর্মস্থল আর আয় বন্ধের কঠিন পরিস্থিতিতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। বিশেষ করে ১৪ এপ্রিলের সর্বাত্মক লকডাউনকে কেন্দ্র করে এসব মানুষের দীর্ঘ সারি এখন শিমুলিয়া ঘাটে। সাজানো গোছানো ঘরের আসবাবপত্র ট্রাক কিংবা পণ্যবাহী পিকভ্যানে তুলে দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে তারা উপস্থিত হয়েছেন ফেরিঘাটে।
গ্রামে ফেরা যাত্রীরা বলেন, জীবিকা আর উন্নত জীবনের আশায় অনেকেই একদিন আবাস গড়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। তবে করোনার কঠিন বাস্তবতায় আবারও তারা গ্রামের পথে। করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে হয়ত আবারও ঢাকায় ফিরে আসবেন তারা। তবে গ্রামে ফিরে গিয়ে কী করবের সেটি নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া এলাকার ইশরাত জাহান থাকতেন ঢাকার নাখালপাড়ায়। গ্রামে ফেরার যাত্রায় সামিল হয়েছেন তিনিও।
তিনি জানান, মেয়েকে পড়ানোর জন্য ঢাকায় থাকতাম। লকডাউনে পড়ালেখা তো হচ্ছে না উল্টো ঢাকার বাসায় খরচ আর খরচ। অহেতুক খরচ করার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। বরিশালের মুলাদি এলাকার ইসমাইল হোসেন মাছের ব্যবসা করতেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে।
তিনি জানান, ব্যবসায় আর আগের মতো রোজগার নেই। ৩ সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। গত বছরের লকডাউনে যা পুঁজি ছিল তা অনেকখানি শেষ হয়েছে। তাই এখন যা আছে তা দিয়ে গ্রামে ব্যবসা করে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই কথা জানালেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের সালাম শিকদার।
ঘাটে আসা পিকআপভ্যানের চালক রফিকুল জানান, এখনতো আমরা প্রায়ই এমন যাত্রীদের ট্রিপ পাই। বহু মানুষ গ্রামে যাইতাছেগা একবারে। কী করবো মানুষ, কাজ নাই, কাম নাই। এক সপ্তাহেই ঢাকা থেকে বরিশালে এমন ৩-৪টা ট্রিপে গেছি।