দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় হাতিরঝিলের স্যুয়ারেজ লাইনগুলো ভরাট হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় স্যুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করা হয়নি। এ কারণে ড্রেনেজ লাইনে আবর্জনা জমে ধারণক্ষমতা কমেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমেও পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে পরিষ্কার করা না হলে হাতিরঝিলের পাশের এলাকার পানি পাইপে প্রবেশ করতে পারবে না। এতে সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা।
জানা গেছে, হাতিরঝিলের উভয় পাশে স্যুয়ারেজ লাইন নেটওয়ার্কের আওতায় এক হাজার ৮৩০ মিলিমিটার ব্যাসের আরসিসি পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। এই পাইপলাইনের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ও কার্যকারিতা বজায় রাখাতে ১১টি স্পেশাল স্যুয়ার ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) নির্মাণ করা হয়েছে। এই এসএসডিএসগুলোর মধ্যে ৪টিতে মেকানিক্যাল স্ক্রিনিং মেশিন (ময়লা উত্তোলনের সয়ংক্রীয় যন্ত্র) স্থাপন করা হয়। যার দুটিই এখন বিকল।
এর মধ্যে সোনারগাঁওয়ের পেছনের মেকানিক্যাল স্ক্রিন মেশিনের মাধ্যমে ধানমণ্ডি ২৭, গ্রিনরোড, কাঁঠালবাগান এলাকা হতে আগত প্লাস্টিকের বোতল, কাঠসহ কঠিন ময়লা উত্তোলন করা হয়। এসকল ময়লা ছাড়াই শুধু পানি স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে রামপুরা খাল হয়ে বালুনদীতে পড়ে।
বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্যুয়ার নেটওয়ার্কে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ময়লা পানিও ঢুকে পড়ে। এতে প্রকল্পের পরিবেশ নষ্ট হয়। পানিতে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় প্রকল্প কর্মকর্তা (সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড) মেজর তারিক মান্নান আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, এক সময় হাতিরঝিল প্রকল্পের সমগ্র স্যুয়ারেজ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা হতো। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন স্যুয়ারেজ লাইনও পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে পাইপের ভেতর এসএসডিএস বা ম্যানহোলগুলোর তলদেশে আবর্জনা জমে অনেকটাই ভরাট হয়েছে।
জানা গেছে, হাতিরঝিলের উভয় পাশ- মগবাজার, মধুবাগ, নয়াটোলা, মহানগর আবাসিক এলাকা, নিকেতন, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, নাখালপাড়া, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি-২৭, গ্রীন রোড, কাঁঠালবাগান এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি এবং গৃহস্থালি বর্জ্য পানি হাতিরঝিলের উভয় পাশের বিদ্যমান এক হাজার ৮৩০ মিলিমিটার এসএসডিএস লাইনে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু লাইনগুলো বন্ধ থাকায় এসব এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চলতি মৌসূমে এগুলো খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মেজর তারিক মান্নান সভায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ডিএনসিসির নতুন নির্মিত পাইপলাইন হাতিরঝিলের স্যুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হলে পাইপের ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক পানি পড়বে। এ অবস্থায় ঝিলের ডায়া পাইপের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হবে। তাই চলতি বর্ষা মৌসুমের আগেই পরিষ্কার করার দাবি জনিয়েছেন তিনি। তা না হলে হাতিরঝিলের পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি পাইপে ঢুকতে পারবে না।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় বিভিন্ন কাজের অনুকূলে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, লেকের শ্যাওলা ও ময়লা পরিষ্কার বাবদ ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং গুলশান বনানী-বারিধারা লেকের পাড় বাঁধাইয়ের জন্য ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকাসহ মোট ২ কোটি ৩৫ লাখ ৮ হাজার টাকার চাহিদা রাজউক বরাবর পাঠানো হয়।
দীর্ঘদিনেও চাহিদাকৃত অর্থ পাওয়া যায়নি বলে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও ২টি মেকানিক্যাল স্ক্রিন অকেজো থাকায় এসএসডিএস আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এটি গত বছরের প্রাক্কলন বলেও জানান তিনি। এ বছর এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম চাহিদাকৃত অর্থ দ্রুত চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সমস্যা সমাধানে সেনাবাহিনী কাজ করছে। তাদেরকে যে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে আমরা তা দেবো।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাতিরঝিলে পানি যেখান দিয়ে যাবে সেটি কিন্তু রাজউকের। এখন রাজউকের ড্রেন কে পরিষ্কার করবে? আমরা ড্রেন করে ফেলেছি। এই অল্প একটু (রাজউকের ড্রেন) কাজের জন্য আমি বসে থাকব না। এই কাজ হয় রাজউক করবে। না হয় আমি বলবো, হাতিরঝিল যদি মেইনটেইন করতে না পারেন, আমাদের দিয়ে দিন। খালের মতো হাতিরঝিলের পুরো দায়িত্ব ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণসহ এর সৌন্দর্যবর্ধনেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই এই লাইনে জমে থাকা কঠিন বর্জ্য অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া রাজউক থেকে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের যে পাওনা রয়েছে সেই পাওনাও পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’-বাংলা ট্রিবিউন