শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১, ১২:৩০:৫৬

কুরআনের হাফেজ নজরুল ভালোবেসে ছিলেন প্রতিবেশী এক মেয়েকে, এখন ২০ বছর ধ'রে শিকলব'ন্দী!

 কুরআনের হাফেজ নজরুল ভালোবেসে ছিলেন প্রতিবেশী এক মেয়েকে, এখন ২০ বছর ধ'রে শিকলব'ন্দী!

চোখে পানি আসার মতো, নজরুল ইসলাম নামে এক কোরআনে হাফেজের করু'ণ কাহিনী! বাড়ি তার ে উপজেলার নতুন বান্দুরা গ্রামে। অদম্য মেধাবী এই ছেলেটির বয়স এখন ৪০ বছর। পড়াশোনায় ছিলেন অদম্য মেধাবী। শুধু তাই নয়, ছিলেন কুরআনের হাফেজও। স্পষ্ট ভাষায় তার সুমধুর কন্ঠের আযান আর কুরআন তেলোয়াতে মু'গ্ধ হতো এলাকাবাসী।

জানা যায়, স্বাভাবিক থাকা অব'স্থায় নজরুল ভালোবেসে ছিলেন প্রতিবেশী এক মেয়েকে। তবে দুই পরিবারের মতের অমিল থাকায় সে সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। কিছুদিন পরই অন্যত্র বিয়ে হয় মেয়েটির। ওই বিয়ের পর থেকেই মানসিকভাবে ভে'ঙে পড়ে সে। ভুলে থাকার সহজ সমাধান খুঁ'জতে আস'ক্ত হয়ে পড়েন নে'শায়। পারিপা'র্শ্বিক নানা মান'সিক চাপের পাশাপাশি শারীরিক নি'র্যাতনও চলে তার উপর। পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলেন মান'সিক ভারসা'ম্য। তারপর থেকেই শিকলে বাঁ'ধা পড়ে মেধাবী নজরুলের জীবন।

২০০১ সালের পর নতুন আর কোনো ক্ষণ যু'ক্ত হয়নি নজরুলের স্মৃতিতে। যে কারণে ২০ বছরের আগের স্মৃতিতেই থমকে আছেন নজরুল। অস'চ্ছল পরিবার চিকিৎসা করতে না পারায় ভা'ঙাচোরা একটি ঘরে শিকলব'ন্দী সময় কা'টে তার।

সরেজমিনে তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ভা'ঙাচোরা টিনের-চালা একটি ঘরের বা'রান্দায় শিকল পায়ে মাটিতে বসে আছেন নজরুল। শরীরে শুধু প্যান্ট ছাড়া আর কোনো কাপড় নেই। শি'কল পরা অব'স্থায় ঘরের ভেতরেই নজরুলের গোসল ও পয়ঃনিস্কাশনের জন্য একটা গ'র্ত করে দেয়া হয়েছে। তবে ঘ'রটি কাঁ'চা হওয়ায় গোসলের পর পুরো ঘর কাঁ'দা হয়ে যায়। এছাড়া ঘরটি ভা'ঙা হওয়ায় শীতকালে বেশ ক'ষ্ট করতে হয় নজরুলকে।

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নজরুল দ্বিতীয়। বাবা আয়নাল দেওয়ান ও মা নবীজা বেগম ছেলের চিকিৎসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত। তবে সুফল মেলেনি কোনো। তারা মা'রা যাবার পর মানসিক ভারসা'ম্যহীন নজরুলের দায়িত্ব বর্তায় দুই বোনের উপর। ইচ্ছা থাকার পরও আর্থিক সং'কটে তার উন্নত চিকিৎসার ভার নিতে পারছেনা পরিবারটি।

নজরুলের বড় বোন কোহিনুর বেগম বলেন, অর্থের অ'ভাবে পুরোপুরিভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ভাইকে শিকলে বেঁ'ধে রাখতে হচ্ছে। আমার মেয়ে আঁ'খি এখন তার মামার দেখাশুনা করেন। সরকারিভাবে আমাদের কোনো ভাতাও দেয়া হচ্ছে না। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তার অনু'রোধ জানান নজরুলের এ বোন।

নজরুলের দুলাভাই মো. আবজাল বলেন, আর্থিক স'ঙ্গতি না থাকায় নজরুলের চিকিৎসার জন্য তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

নজরুলের ছোট বোন শাহিনুর বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাবা মই'রা গেছে অনেক আগে। মা পাগল ভাইটারে নিয়া অনেক ক'ষ্ট করছে। মাইনষের বাড়ি বাড়ি কাজ কইরা ভাইয়ের চিকিৎসা করাইছে। দুই মাস আগে মা-ডাও ম'ইরা গেল। ভাইরে কে দেখবে, ওর যে কি হইব আল্লায় জানে?

নজরুলের খালা খোদেজা বেগম জানান, মানসিক ভারসা'ম্যহীন থাকায় নজরুল প্রতিনিয়ত বিভিন্নজনকে মারধ'র ও বির'ক্ত করত, নে'শা করতো। অর্থাভা'বে তার পুরোপুরি চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয়ে উঠেনি। ওর যন্ত্রণার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ বছর আগে পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে ঘরে বেঁ'ধে রাখা হয়েছে। তবে মাঝে একবার কিছুটা সু'স্থ হয়ে কাজও করেছে। কিছুদিন পর আবারও পা'গল হয়ে যাওয়ায় শিকলব'ন্দী করা হয়েছে। এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলেও সে আঘাত করার চেষ্টা করে। এ জন্যই পায়ে শিক'ল দিয়ে বেঁ'ধে রাখা হয়েছে তাকে।

এদিকে, ২০ বছরেও নজরুলের দ্বারে পৌঁ'ছায়নি প্রতিব'ন্ধী ভাতা বা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা। ভা'ঙাচোরা একটি ঘরে অমানবিক জীবন ধারণ করা আর খেয়ে না খেয়ে দিন পার করা পরিবারটি এখন কি করবে সেই ভেবে দি'শেহারা পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরাও।

নবাবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। পুরোপুরি পাগল হলে তাকে প্রতিব'ন্ধী ভাতা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে পরিবারের আশা, সুচিকিৎসা পেলে হয়তো স্বাভাবিক হবে নজরুলের জীবন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে