ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা মিলল একাধিক করোনা রোগীর আত্মীয়দের কান্না। কেউ ভর্তি হতে পেরেছেন আবার কেউ অন্য হাসপাতালে ছুটছেন।
‘হ্যালো কে, শুনছেননি আপনার ভাই তো মা'রা গেছে। অ্যাই আনুমানিক চাইরটার সময়। লাশ বাড়িতে লইয়া যাইতাছি। পারলে যারে যারে পারেন একটু জানাইয়া দিয়েন।’
শনিবার (৩ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক-২) করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লা'শের পাশে বসে করোনায় স্বামীর মৃ'ত্যু সংবাদ দিচ্ছিলেন এক নারী। শোকে পাথর হয়ে কাঁদতে যেন ভুলে গেছেন তিনি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে জ্বর। গত রাত থেকে শ্বাসকষ্ট। সকালে ভর্তি করলাম আর বিকেলেই মা'রা গেল। চিকিৎসার সুযোগটুকুও দিল না।’
পাশেই আরেক মৃত রোগীর স্ত্রী কাঁদছিলেন। তার স্বামী কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে করোনা ধরা পড়ে কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে আজ বিকেলে মা'রা যান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনজন রোগীর মৃ'ত্যু হয়। একদিকে করোনায় মৃ'তের স্বজনরা ম'রদেহ নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছিলেন আরেক দিকে রোগী ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছিলেন করোনা আ'ক্রান্তদের স্বজনরা। কেউ ভর্তি হতে পারছিলেন আবার কাউকে অন্য হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছিল। বিশেষ করে মুমূ'র্ষু রোগীকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিতে দেখা যায়। এই মুহূর্তে ঢামেক হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই বলেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এ দৃশ্য শুধু ঢামেক হাসপাতালেই নয়, অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী মৃ'ত্যু ও ভর্তিচ্ছু রোগীর চাপ বেড়েছে। ঢামেক হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালে খরচ কম হওয়ায় রোগীর স্বজনরা প্রথমে সরকারি হাসপাতাল ও পরে শয্যা না পেলে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। শুধু রাজধানীই নয়, বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও রোগীরা চিকিৎসা নিতে রাজধানীতে ছুটে আসছেন।
শনিবার (৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৮৬টি। তার মধ্যে শয্যা খালি রয়েছে ৬ হাজার ৭৯৩টি। সারাদেশে আইসিইউ বেড সংখ্যা এক হাজার ১৯৫টি। শয্যা খালি রয়েছে ৪৬৪টি।