এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরকে হত্যার পর ১০ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ফজিলাতুন্নেছা ওরফে রিয়া। গ্রেপ্তার এড়াতে এক পর্যায়ে তিনি নিজের নাম-পরিচয় পাল্টে ফেলেন। তার নতুন নাম হয় সুহাসিনী ওরফে অধরা। এই নামে তিনি মডেল-অভিনেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৩ সালে মিরপুরের পূর্ব মণিপুরের কাঁঠালতলার ১০৫০/৩ নম্বর ভবনে এএসআই হুমায়ুন কবিরকে শ্বাসরোধ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষাক্ত দ্রব্য শরীরে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। তখন তিনি রাজধানীর শাহ আলী থানায় কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলার বিচারে ফজিলাতুন্নেছাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে ফজিলাতুন্নেছা। তার দেওয়া তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পালিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় যান। সেখানে পোশাকশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। পরে ২০১৫ সালে নিজের নাম-পরিচয় বদলে জাল এসএসসি সার্টিফিকেট তৈরি করেন। সেই পরিচয়ে ঢাকায় এসে একটি মাল্টিমিডিয়া কোম্পানির সেলস্ম্যান হিসেবে চাকরি করেন। ২০১৬ সালে তিনি মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে চিত্রজগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকটি নাটক-বিজ্ঞাপনে তিনি অভিনয় করেছেন বলে জানান।
র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (গণমাধ্যম) জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক সমকালকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে ফজিলাতুন্নেছা তার স্বামীকে নিয়ে এএসআই হুমায়ুনের বাসায় সাবলেট থাকতেন। সেই সূত্রে ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। তখন হুমায়ুনের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিরোধ চলছিল। ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে স্ত্রী তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তিনি ফজিলাতুন্নেছা ও তার স্বামীর সহায়তা চান। তারা এতে রাজি হয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা তিনজন মিলে হত্যাকাণ্ড ঘটান। বিচারে হুমায়ুনের স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড এবং অপর দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
ফারজানা হক জানান, সর্বশেষ রাজধানীর মেরুল বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের একটি বাসায় থাকতেন ফজিলাতুন্নেছা। অনেকদিন ধরেই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল র্যাব। একপর্যায়ে এক সোর্সের মাধ্যমে তার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সুহাসিনী ওরফে অধরাই পলাতক আসামি ফজিলাতুন্নেছা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৫৮ গ্রাম গাঁ'জা, দু'টি মোবাইল ফোন এবং পরিচয় বদলে তৈরি করা এসএসসির জাল সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়।