জাহিদ হাসান সাকিল, সাভার : ভোরে থানা থেকে ফোন আসে এসআই শাহিন আহমেদ নয়নের কাছে। জানানো হয়, রিমান্ডে থাকা আসামির অবস্থা খারাপ। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। দ্বিতীয়বার ফোন করে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার, আসামি মনে হয় মারা গেছে।’
খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে থানায় চলে আসেন আশুলিয়া থানার এসআই নয়ন। এসে দেখেন, আসামিকে থানা হাজত থেকে বের করে মেঝেতে শোয়ানো হয়েছে। তাকে অনেকবার ডাকলেও সাড়া দেননি। এরপর দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে।
খবর পেয়ে বিভিন্ন বিভাগের তিনজন চিকিৎসক জরুরি বিভাগে আসেন। শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ইসিজিসহ বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় তাকে। এরপর চিকিৎসকরা জানান, কিছুই হয়নি।
চিকিৎসকের এই তথ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন এসআই নয়ন। এসব তথ্য জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তিনি বলেন, ‘একটি পোশাক কারখানার মেশিন বিক্রির প্রতারণা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় আসামি রাসেলসহ (৩৬) তিনজনকে।
গতকাল বুধবার সকালে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবাবনবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। আদালতে রওনা হওয়ার আগেই রাসেল অসুস্থতার কথা বলে অচেতন হয়ে পড়ে ও মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে। পরে চিকিৎসকদের কথায় বুঝলাম এটা ছিল রাসেলের অভিনয়।
যাতে আদালতে জবানবন্দি দিতে না হয়।’
এসআই নয়ন বলেন, ‘সত্যি বলতে মৃত্যুর খবর শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকের পরীক্ষার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। তবে আসামি যতই চতুর হোক, আমরাও বিচক্ষণ।’
আসামি রাসেলের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘রাসেল নিজেও পরে স্বীকার করেছে, সে অসুস্থতার ভান ধরেছিল। যাতে রিমান্ডে কোনো চাপ সৃষ্টি না করা হয় এবং আদালতে যেতে না হয়। তাকে বোঝানোর পর সে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।’
আসামি রাসেলের গ্রামের বাড়ির বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। বর্তমানে রাজধানীর মিরপুরে পরিবারসহ বসবাস করেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও রেজিস্ট্রার ডা. রতন গীর কবির বলেন, ‘বুধবার সকালে আশুলিয়া থানা থেকে পুলিশ রাসেল নামে একজন রোগীকে নিয়ে আসছিল। তার বুকে ব্যথা ও বমির কথা জানায়। আমরা বুকের ইসিজিসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সব নরমাল পেয়েছি। রোগীর তেমন কোনো সমস্যা আমরা পাইনি। পরে ছাড়পত্র দিয়ে দিই।’- কালের কণ্ঠ