শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬, ০২:৫৫:৫২

প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ, মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা

প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ,  মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা

আতাউর রহমান: শিল্পপতি জাহাঙ্গীর হত্যার পেছনে রয়েছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সৈকত আহম্মেদ-আফসানা মিমি দম্পতি। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংঘটিত এই হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামী সৈকত অপহরণের পরিকল্পনা করেন; স্ত্রী মিমি টার্গেট ব্যক্তিকে প্রেমের ফাঁদসহ নানা কৌশলে অপহরণ করে হাতিয়ে নেন টাকা। ৫-৬ জনের সদস্য রয়েছে ভয়ঙ্কর এই চক্রে। পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটায় হত্যা করতে দ্বিধা করেন না তারা। চলতি সপ্তাহে আদালতে অপহরণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন সৈকত। গত ১৩ জানুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মহাসড়কের পাশে ঝোপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বড় সুটকেস। সেটি খুলে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া যায়। শুরুতে লাশের পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও কয়েকদিন পরই জানা যায়, এটি শান্ত কেমিক্যাল কোম্পানির কর্ণধার শিল্পপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের লাশ। লাশ উদ্ধারের দু'দিন আগে তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অপহরণ হন। পরিচয় জানার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পাঁচ মাস পর সম্প্রতি ওই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

শিল্পপতি জাহাঙ্গীরের স্বজনরা বলছেন, অপহরণের পর পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার বাদী তার ভাই কবির হোসেন বলেন, 'তার ভাইকে অপহরণের পর মোবাইল ফোনে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করা হয়। অপহরণকারীদের সঙ্গে দর কষাকষির এক পর্যায়ে তারা এক কোটি টাকার বিনিময়ে জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়।' তিনি জানান, বিষয়টি পুলিশ ও র‌্যাবকে জানালে তারা টাকা দেওয়ার ফাঁদ পেতে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। তবে অপহরণকারীরা নানা কৌশলে সময় নষ্ট করে। তাদের আর ধরা না গেলেও কুমিল্লায় জাহাঙ্গীরের লাশ পাওয়া যায়।

পুলিশ জানায়, শিল্পপতি জাহাঙ্গীরকে অপহরণের মূল হোতা সৈকত আহম্মেদ ও তার স্ত্রী আফসানা মিমি। টার্গেট ব্যক্তিকে কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিমি নিজের বাসায় নিয়ে অপহরণের পর টাকা আদায় করতেন। জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গেও তিনি মোবাইল ফোনে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ১১ জানুয়ারি মিমি তার বাসার এক অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরকে নিমন্ত্রণ করেন। তিনি সেখানে গেলে নানা কৌশলে সময় পার করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর হাত-পা বেঁধে স্বজনদের ফোন দিয়ে পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক জাকির হোসাইন বলেন, 'সৈকত ও তার স্ত্রী মিমি পেশাদার অপহরণ চক্রের সদস্য। নানা কৌশলে এই দম্পতি টার্গেট করা লোকজনকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের পরিকল্পিত ফাঁদে পা দিয়ে নিহত হন শিল্পপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। পরে কুমিল্লায় মহাসড়কের একটি ঝোপে লাশটি গুম করা হয়।' পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, 'কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করা লাশটি শিল্পপতি জাহাঙ্গীরের বলে শনাক্ত হওয়ার পর ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। প্রযুক্তিগত তদন্তে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অপহরণ চক্রের মূল হোতা আফসানাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী অপহরণ ও হত্যায় তার সহযোগী নূরে আলম, জাহাঙ্গীর আলম স্বাধীন ও প্রতীককে গ্রেফতার করা হলে তাদের মধ্যে দু'জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।'

যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, 'দীর্ঘদিন গুপ্তচর লাগিয়ে গত ১৪ জুন চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী সৈকত আহম্মেদকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় এনে তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিলে সৈকত পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। চলতি সপ্তাহে তিনি অপহরণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।' পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সৈকত জানান, শিল্পপতি জাহাঙ্গীরকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। তাদের ধারণা ছিল, তাকে অপহরণ করা গেলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। তাই মিমিকে দিয়ে ফাঁদ পেতে তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার মুক্তিপণের জন্য পাঁচ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। সৈকত জানিয়েছেন, শিল্পপতির হাত-পা বেঁধে টাকার জন্য মারধর করার সময় তিনি মারা যান। এতে আর মুক্তিপণের টাকা পাননি। বাধ্য হয়ে লাশটি কম্বলে মুড়িয়ে বড় লাগেজে ভরে মাইক্রোবাসে কুমিল্লায় ফেলে দেওয়া হয়। এর আগে তার স্ত্রীর মাধ্যমে ছোটখাটো ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিলেও শিল্পপতি জাহাঙ্গীর ছিল তাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট।-সমকাল

২৪ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে