জান্নাতুল মুমিনা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: দশ রমজানের বিকেলে একটি খাতা আর কলম নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। উদ্দেশ্য, ইফতারের পূর্বমুহূর্তে পথশিশুদের ইফতারের জন্য মানবিক আবেদনের দৃশ্যগুলো সুন্দর করে তুলে ধরা। আমি অমর একুশের নিচের রাস্তা দিয়ে ক্যাফেটোরিয়ার সামনে নামলাম। দূর থেকে দেখলাম একটি মেয়ে কিছু জটলাবাধা ছেলেমেয়েদের কাছে কিছু টাকা চাচ্ছে, আমি মেয়েটিকে ফলো করলাম ততক্ষণে সে ক্যাফেটোরিয়ার দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। তার সাথে আরো কিছু শিশু এসে দাঁড়াল। তারা ভেতরে ঢোকার ব্যর্থ চেষ্টা করল এক ভদ্রলোক তাদের বাধা দিলো। ভেতরে বইয়ের ভাষায় ভদ্রলোকদের ইফতারের আয়োজন চলছে সেখানে ওরা ঢুকে পড়লে পরিবেশটা অশিক্ষিত হয়ে যাবে। এতক্ষণে আমি মেয়েটার চেহারা আয়ত্ত করে ফেললাম। মেয়েটির বয়স ১২ কী তেরো, মুখটি ফর্সা গোল, চোখ দুটি বড় ভাসা ভাসা, চুলগুলো এলোমেলো কোঁকড়ানো, পরনে একটি ময়লা জামা যা সন্ধ্যার গোধূলিতে আরো নোংরা দেখাচ্ছে। এবার আমি মেয়েটির পিছু নিলাম কারণ এ মেয়েটির সাক্ষাৎকারটিই আমার চাই। সে এবার হেঁটে গিয়ে এক আপুর কাছে বসল। আর তার ইফতারের আবেদনটি করল কিন্তু এবারো সে ব্যর্থ হলো এবার আমার ক্যামেরার সাটারে ক্লিক পড়ল। তার করুণাময় ছবিটি আমি তুললাম। এবার আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম এবং তাকে ডেকে পাশে নিয়ে বসলাম।
প্রশ্ন করলাম কি নাম তোমার ?
বলল লিমা।
কোথায় থাক?
সাভারে।
বাবা কি করে?
ভাঙারির দোকানে কাজ করে।
তোমার মা কি করে?
মা অসুস্থ, ঘরে থাকে।
তুমি স্কুলে যাও না?
যাই, ব্রাকে।
কোন ক্লাসে পড়ো?
ফাইবে।
এতক্ষণে আমার পাশে আরো চার-পাঁচটি পথশিশু এসে ভিড় জমাল, ভাবছিলো ওকে কিছু দিচ্ছি। এর ফাঁকে এক শিশু বলে ফেলল, আমাকে কেউ একটু শুঁটকি ভর্তা আর ভাত দিলে খেয়ে শেষ করে ফেলতাম, সাথে সাথে লিমাও বলল তার প্রিয় খাবারের কথা, একটু পাঙ্গাশের ঝোল হলে আমি পুরো এক পাতিল ভাত খেতে পারি। আমার কথার সাথে সাথে ইফতারেরও সময় ঘনিয়ে আসছে, পাশ থেকে ইফতারের আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে’।
এবার লিমার প্রশ্ন এগুলো লিখে কি করবেন?
বললাম, তোমাকে নিয়ে একটি গল্প লিখব?
তোমরা কয় ভাইবোন?
তিন বোন, ভাই নেই। লিমার উত্তরের ভেতর একটু আক্ষেপ হয়তো ভাই থাকলে পরিবারের আয় একটু বেশি হতো।
তুমি কত নম্বর?
দ্বিতীয়
বড় বোন কি করে?
ভাঙ্গারি টোকায়
তোমার ছোট বোন কি করে?
ঘরে থাকে মার সাথে
তুমি সকালে কি খেয়ে?
কিছু খাইনি, সকালে উঠে মক্তবে গেছি তারপর স্কুলে গেছি, বাসায় গিয়ে দেখি আম্মা ভাত রান্না করেনি তাই রাগ করে চলে এসেছি।
এখানে কি খেয়েছ?
এক আপু একটু জুস দিছিল আর কিছু বিস্কুট।
তোমার আম্মু আজ কি রান্না করবে?
সরপুঁটি মাছ।
মাছ কি তোমার বাবা কিনেছেন?
না, আমি বাজার থেকে নরম মাছ চেয়ে নিয়েছিলাম।
আমাদের খাবার টেবিল উপচে পড়ে ইফতারিতে। অথচ এসব পথশিশুরা পায় না তাদের প্রয়োজনে সমান্য খাবারও। আমরা কি একবারও ভাবি ওদের কথা?-নয়া দিগন্ত
২৬ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস