আসাদুজ্জামান : হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি আদালতে বলছিল, বন্দী জীবন তাঁর মোটেও ভালো লাগছে না। অনেক কষ্টে আছে সে। তাই তাকে বন্দী জীবন থেকে মুক্ত করা হোক। আদালত গভীর মনোযোগ নিয়ে মেয়েটির কথা শোনার পর আদালত মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলেন, তোমার কোনো অভিভাবক আদালতে এসেছে কি না? একই কথা বলেন সরকারি কৌঁসুলিকে। জবাবে সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান, মেয়েটির কোনো অভিভাবক আদালতে আসেনি। তারপরও তাঁর অভিভাবককে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। রোববার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক রুহুল আমিন মেয়েটিকে টঙ্গীর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, গত ১৪ জুন তাকে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে মেয়েটিকে আদালতে পাঠিয়ে এক প্রতিবেদন জমা দেন তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজহার আলী। এতে দেখা যায়, ঢাকায় মেয়েটির কোনো ঠিকানা নেই। সে ভবঘুরে অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে। মেয়েটির দাবি, ঘটনার দিন বসুন্ধরা সিটির পেছনে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন পুলিশ তাকে সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যায়। ১৬ বছর বয়সী মেয়েটি দাবি করে, তার বাবা আছে। আছে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। যখন সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত তখন তাঁর মা ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তার বাবা ফের বিয়ে করেন। পরে সে ঢাকায় নিজেদের বাসায় সৎ মায়ের কাছে বড় হতে থাকে। বাবা বিদেশে থাকায় সৎ মা তাকে নির্যাতন করতেন।
মেয়েটির দাবি, রাজধানীর একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে সে। আদালতেও মেয়েটি একই কথা বলেছে। মেয়েটির স্থায়ী ঠিকানা থাকার পরও কেন পুলিশ তাঁকে ভবঘুরে হিসেবে উল্লেখ করেছে জানতে চাইলে এসআই আজহার আলী বলেন, মেয়েটি তাঁর কাছে কোনো স্থায়ী ঠিকানা বলেনি। তাই তাঁকে ভবঘুরে হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, মেয়েটি মাদকাসক্ত। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে মুক্তা আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তিন বছর ধরে মেয়েটি তাঁদের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত। কিন্তু সে নেশাগ্রস্ত।
একই কথা বলেন, কথিত দুলাভাই আবুল কালাম আজাদ। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয় মেয়েটি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে রয়েছে এমন খবর তাঁর বাবাকে দেওয়া হয়েছে কিনা? জবাবে তাঁরা বলেন, মেয়েটির বাবার সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুস সাত্তার দুলাল বলেন, মেয়েটির অভিভাবক আদালতের কাছে তাঁদের জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করতে পারবেন। মেয়েটিকে যখন পুলিশ আদালত থেকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সে বলছিল, ‘আমি সুস্থ জীবন চাই। সুন্দর করে বাঁচতে চাই।-প্রথম আলো
২৮ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ