আসাদুজ্জামান: ঈদের দিন থাকতে হবে ওদের বদ্ধ ঘরে। যেখানে পরিচিত কেউ থাকবে না। বাবা-মা আদর করে সেমাই খাইয়ে দেবে না। পাবে না কোনো সেলামি। শিশু দুটি আক্ষেপ করে বলছিল, ‘তাদের কপালটাই খারাপ।’একজনের নাম মোস্তফা ওরফে রিয়াজ। তার বয়স আট বছর। বাবার নাম নূর হোসেন। মা ফাতেমা খাতুন। শিশুটি থানা কিংবা জেলার নাম বলতে পারে না। কিন্তু কথা বলে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায়। শিশুটি বলছিল, ‘তাঁর মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। সে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে চায়।’ আরেক শিশুর বয়স বারো বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত মোহাম্মদপুর এলাকায়। তার ভাষ্য, তার বাবা খুব অসুস্থ। মাও অসুস্থ। ঈদের জামা-কাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই নতুন জামাকাপড় কেনার টাকা রোজগারের জন্য কয়েক দিন ধরে রাস্তায় পড়ে থাকা জিনিসপত্র টোকাচ্ছিল সে। কিন্তু গত বুধবার মোহাম্মদপুর এলাকার লোকজন তাকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। কিন্তু তাঁর বাবা-মাকে কিছুই জানানো হয়নি।
এই দুটি শিশুকে পুলিশ ঢাকার শিশু আদালতে হাজির করলে আদালত তাঁদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। বুধবার রিয়াজকে এবং বারো বছরের শিশুটিকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়। মামলার নথি থেকে জানা গেছে, আট বছরের শিশু রিয়াজ গত ২৭ জুন রাত ১১টার দিকে বিমানবন্দর গোল চত্বরের পশ্চিমাংশে কান্নাকাটি করছিল। তখন বিমানবন্দর থানার এসআই এম এম মামুনুর রহমান শিশুটিকে থানায় নিয়ে যান। আর মোহাম্মদপুর এলাকার বারো বছরের শিশুটিকে গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে চোর সন্দেহে স্থানীয় লোকজন আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করে।
শিশু মোস্তফা আদালত এলাকায় বলে, ‘বাবা-মা আমাকে খুব আদর করে। আমি বাবা-মাকে ছাড়া কীভাবে থাকব? আমাকে বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে যান।’ অন্যদিকে মোহাম্মদপুর থেকে আটক শিশুটি বলে, ‘সত্যি আমি কোনো কিছু চুরি করিনি। জীবনে কোনো দিন খারাপ কাজ করিনি। তারপরও স্থানীয় লোকজন তাকে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছে। বাবা-মাও কিছু জানে না।’ এসব কথা বলার সময় হাউমাউ করে কাঁদছিল শিশুটি। ঢাকার শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি সাহাবুদ্দিন মিঞা বলেন, শিশু দুটির অবস্থা দেখে খুব খারাপ লেগেছে তাঁর। শিশু দুটির আইনত অভিভাবক আদালতে এসে নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তাদের দিয়ে দেবেন। আমিও সুপারিশ করব। এটা না হলে শিশু দুটিকে ঈদের মধ্যে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকতে হবে।-প্রথম আলো
১ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ