মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৪৬:০৫

‘ভাই আল্লাহর রাস্তায় যাচ্ছি, পরকালে দেখা হবে’

‘ভাই আল্লাহর রাস্তায় যাচ্ছি, পরকালে দেখা হবে’

নিউজ ডেস্ক: ‘ভাই, আল্লাহর রাস্তায় চলে যাচ্ছি। দোআ করিও। পরকালে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে’ স্বজনদের সঙ্গে এসব কথা বলেই বছর খানেক আগে স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক মেয়ের জামাতাসহ দেশ ছেড়েছিলেন এক চিকিত্সক। সূত্রমতে, তারা প্রথমে বাংলাদেশ থেকে যান মালয়েশিয়ায়, পরে সেখান থেকে তারা পাড়ি জমান তুরস্কে। জঙ্গি কার্যক্রমে অংশ নিতেই তাদের এই বিদেশ যাত্রা। প্রসঙ্গত, এই চিকিত্সকের এক মেয়ে ও তার স্বামী দুজনেই নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন।

সপরিবারে বিদেশ পাড়ি দেওয়া এই চিকিত্সকের নাম রোকনুদ্দীন খন্দকার। ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রুহুল আমীনের অধীন রেজিস্ট্রার ছিলেন তিনি। যাওয়ার আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

একজন চিকিত্সকের সপরিবারে জঙ্গি কার্যক্রমে যোগ দেয়ার বিষয়টি এক বছর পর ফাঁস হলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিত্সকরা বিস্মিত হয়ে যান। তারা বলছেন, তারা কল্পনাও করতে পারছেন না যে তার মতো একজন চিকিত্সক জঙ্গি কার্যক্রমে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছেন। তারা জানান, শিশু হাসপাতালে চাকরি করা কালে তার মধ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ছাপ দেখা যায়নি।

রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার ৪৪১/বি নম্বর বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার। তার স্ত্রী নাইমা আক্তার মালিবাগের হোমিও চিকিত্সক ডা. আলী আহম্মেদের মেয়ে। পৈত্রিক সূত্রে মালিবাগের ওই বাড়ির মালিক নাইমা আক্তার ও তার ছোট বোন ডা. হালিমা আক্তার। সাত তলা বাড়ির ১৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে দুই বোন ৭টি করে ফ্ল্যাটের মালিক। এই বাড়ির তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার। তার বড় মেয়ে রেজওয়ানা রোকন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ওই বিভাগের শিক্ষার্থী শিশিরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

গত বছরের জুনে একদিন হঠাৎ করে তারা সপরিবারে বিদেশ যেতে রওনা দেন। বিদায় বেলায় পরিবারের সদস্যদের কাছে রোকনুদ্দীন বলেন, ‘ভাই, আল্লাহর রাস্তায় চলে যাচ্ছি। দোআ করিও। পরকালে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে।’

গতকাল মালিবাগের ওই বাড়িতে কথা হয় নাইমা আক্তারের ছোট বোন ডা. হালিমা আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছর রোজার সময়ে হঠাৎ একদিন তার বোন তাকে জানান যে সপরিবারে তারা বিদেশ যাবেন। এর ২-৩ দিন পর একদিন সন্ধ্যায় তাকে জানান যে ওইদিন রাত ২টায় তাদের বিদেশ যাওয়ার ফ্লাইট। প্রথমে তারা মালয়েশিয়া যাবেন। এরপর সেখান থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। তার স্বামী রোকনুদ্দীন খন্দকার সেখানে একটি হাসপাতালে চাকরি পেয়েছেন।

হালিমা আহমেদ আরো বলেন, রোকনুদ্দীনের সঙ্গে তার স্ত্রী, দুই সন্তান রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকন, রেজওয়ানা রোকনের স্বামী সাদ কায়েস রওনা দেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। রোকন উদ্দিনের বড় ভাই আফাজ উদ্দিনের ছেলেমেয়েরা এখন সাতটি ফ্ল্যাট দেখাশোনা করছে।

হালিমা আহমেদ বলেন, সদ্য সমাপ্ত রমজান মাসে হঠাৎ একদিন একটি বিদেশি নম্বর থেকে তার কাছে মোবাইল ফোনে কল আসে। ওপার প্রান্ত থেকে নাইমা আহমেদ জানান যে তারা তুরস্কে আছেন, ভালো আছেন। এর বেশি কথা হয়নি।

এক পরিবারের পাঁচজন এক বছর ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি তদন্ত করতে গত বৃহস্পতিবার রামপুরা থানা পুলিশের একটি টিম মালিবাগের ওই বাড়িতে যায়। পুলিশ তদন্ত শেষে নিশ্চিত হয় যে তারা বাংলাদেশে নেই।-ইত্তেফাক

১৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে