শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬, ০১:০৫:০০

সন্ধ্যা নামতেই গুলশানজুড়ে নেমে আসে নীরবতা!

সন্ধ্যা নামতেই গুলশানজুড়ে নেমে আসে নীরবতা!

মহিউদ্দিন অদুল: হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গি হামলা বদলে দিয়েছে গুলশানের চেনা চিত্র। গত ১লা জুলাইয়ের জঙ্গি হামলার আগের ব্যস্ততা ফেরেনি গত ২২ দিনেও। দিনের গুলশানের রাস্তাঘাট এখনও ভিড় কম। সন্ধ্যা নামতেই গুলশানজুড়ে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। হোটেল, রেস্তেরা, বার, বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতাসমাগম কমে গেছে কয়েকগুণ।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত গুলশানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে  দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে সব সড়ক ও এলাকায় লক্ষ করা গেছে বাড়তি নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েক স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছেন ওই এলাকায়। স্থানে স্থানে করা হচ্ছে তল্লাশি।


সরজমিন দেখা গেছে, নিরাপত্তার প্রয়োজনে গুলশানের সঙ্গে সংযুক্ত মাঝারি ও প্রধান সড়কগুলোতে বসেছে তল্লাশি চৌকি। গুলশানে ঢোকার পথেই গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না পথচারীও। হাতে বা কাঁধে ব্যাগ থাকলে তল্লাশি করা হচ্ছে। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের বনানী লেকের সেতুর ওপর চেকপোস্টে তল্লাশির কারণে যানজট লাগতেও দেখা গেছে।

কিছুটা এগুলেই গুলশান-২-এর আগে পড়বে আইনুদ্দিন সড়ক। এর প্রবেশপথে বসানো হয়েছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড। গুলশান গোলচত্বরের আগেও কূটনৈতিক জোন পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয় সংলগ্ন সড়কেও সন্ধ্যায় ব্যারিকেড বসানো হয়। কাছাকাছি উত্তর গুলশানে ঢোকার পথেও আর একটি ব্যারিকেড ও পুলিশ পাহারায় গাড়ির গতি ও প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে।

ঘটনার পর থেকে গুলশান-২-এর ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী বাসচলাচল বন্ধ রয়েছে। গুলশান-১-এর ওপর দিয়ে বাসচলাচল করলেও তা মহাখালী থেকে গুলশান লিংক রোড দিয়ে ওই এলাকা অতিক্রম করছে। বাসগুলোকে গুলশান-১ বা ২-এর সঙ্গে সংযুক্ত অন্য কোনো সড়কে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

এভাবে গুলশানের প্রধান ও মাঝারি সড়কে যানবাহন ও পথচারি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। ফলে ওই এলাকায় যানবাহন ও লোকজন চলাচল কমে গেছে। সন্ধ্যা নামতেই একেবারে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে পুরো গুলশান। অনেকেই সোজা অফিস থেকে বাসায় চলে যান। নেহায়েত কাজ না থাকলে বের হচ্ছেন না দেশি ও বিদেশিরা। শুধু গুলশান আবাসিক এলাকা নয়, গুলশানের বাণিজ্যিক এলাকার চিত্রও প্রায় একই।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশান-২ গোলচত্বরে দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকজনকে চলাফেরা করতে। মার্কেটের দোকানগুলো খোলা থাকলেও ক্রেতা কম। গোলচত্বর সংলগ্ন ল্যান্ডমার্ক টাওয়ারের নিচতলায় মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন ক্রেতা দেখা গেছে। ল্যান্ডমার্ক শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, হামলার আগে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই মার্কেটের বিভিন্ন ধরনের ৩০টি দোকানে কয়েকশ ক্রেতার সামাগম থাকতো। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক বিদেশি ক্রেতাও থাকতেন। এখন সন্ধ্যা থেকে মার্কেট বন্ধ করা পর্যন্ত পুরো মার্কেটে সব মিলিয়ে ৫০ জন ক্রেতাও হচ্ছে না।

আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে বিদেশিরা সন্ধ্যার পর তো আসছেই না, দিনেও কম আসছেন। ১লা জুলাইয়ের ঘটনার পর থেকে গুলশান-২-এর প্রায় মার্কেটেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় গাড়িচালক আবদুল আওয়াল বলেন, আগে সন্ধ্যার আগে-পরে বিদেশিরা রাস্তায় জগিং করতেন, ঘুরে বেড়াতেন, আড্ডা দিতেন। স্থানীয়রাও এসবে ব্যস্ত থাকতেন।

কিন্তু আর্টিজানে হামলার পর থেকে এ অবস্থা আর নেই। ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা ঘটনা ঘটে। ওই সড়কে গিয়ে দেখা গেছে কিছুক্ষণ পর পর স্থানীয়দের গাড়ি যাতায়াত করতে। বেশ কিছুক্ষণ পর পর দু-একজন পথচারির আসা-যাওয়াও চোখে পড়ে। আর আর্টিজানের ঢোকার পথে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা।

 গুলশান-২-এর ৭১ নম্বর সড়কের ৯/সি নম্বর বাড়ির হোটেল ও রেস্তরাঁ ইমানুয়েল ইন-এ গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র তিনজন অতিথি রাতের খাবারের জন্য সেখানে গিয়েছেন। এর মধ্যে একজন বিদেশিও ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজর সংগ্রাম রোজারিও বলেন, আমাদের হোটেলের ৩০ কক্ষ প্রায়ই বুকিং থাকতো। ঘটনার পর তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

এখন একজন মাত্র অতিথি আছেন। তিনি বাহরাইনের নাগরিক। আর প্রতি রাতে ৩০ থেকে ৩৫ জন অতিথি ডিনারে এলেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) এসেছেন মাত্র তিনজন। ৭৬ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাসায় রয়েছে কোরিয়া-বাংলাদেশ ক্লাব বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট লিমিডেট। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রাহকের চেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি।

বারটির ব্যবস্থাপক নিরোদ পান্ডে বলেন, আগে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাহকের উপস্থিতি থাকতো। এখন এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ জনে নেমে এসেছে। ঘটনার পর থেকে ডাচ ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও বার এখন বন্ধ রয়েছে। তবে স্থানীয় অনেকে বলছেন, বাড়তি নিরাপত্তার কারণে অনেকে চলাচল বাড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তাদের ধারণা।-এমজমিন

২৩ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে