শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬, ০৯:২৪:২৯

'গুলশানের সেই নারী জঙ্গি মানসিক ভারসাম্যহীন'

'গুলশানের সেই নারী জঙ্গি মানসিক ভারসাম্যহীন'

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নরসিংদী থেকে রুমা আক্তার (৩৫) নামে এক নারীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে।

তবে তার পরিবারের দাবি, রুমা মানসিক ভারসাম্যহীন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছে তারা।

তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা বলেছেন, 'প্রকৃত অপরাধী হলে তাকে যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।'

এদিকে তার বোন জানিয়েছে, গত ৩ মাস আগে রুমা দুবাই থেকে দেশে ফেরেন।

সম্প্রতি হলি আর্টিজানে হামলার দিনের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে র‌্যাব। এতে ঘটনার রাতে চারজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় যাদের একজন নারী। ধারণা করা হচ্ছে, আটক রুমা সেই নারী।

ফুটেজের সূত্র ধরে বুধবার গভীর রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুপি গ্রামের বোনের বাড়ি থেকে রুমা আক্তারকে আটক করে। সে পার্শ্ববর্তী পলাশ উপজেলার চরসিন্ধুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুদু মিয়ার ছোট মেয়ে।

রুমা আক্তারের দুই বিয়ে হলেও বর্তমানে তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। তার শ্রাবণ খাঁন নামে ১৫ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাকে বাবার নিকট রেখে তিনি ঢাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর সে দুবাইতে গৃহপরিচারিকার ভিসায় গেলেও তিন মাস পরে ফিরে আসেন রুমা। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

গুলশানে জঙ্গি হামলার সময় রুমা হলি আর্টিজান বেকারির আশপাশে এলাকায় ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন তার বড় বোন সাবিনা আক্তার।

তিনি জানান, 'রুমা একজন মানসিক ভারসাম্যহীন। নয় বছর আগে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই স্বামীর আরেকটি স্ত্রী আছে। ওই স্ত্রী পরে এসে রুমার স্বামীকে নিয়ে যায়। সংসারের ওই ভাঙনের পর থেকেই সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।'

ঘটনার দিন হোটেল আর্টিজানের আশপাশে রুমার অবস্থান করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'ওই দিকে ছিল। ও ওই দিকে ঘুরাফেরা করে। অমুক-তমুকের কাছ থেকে ১০ টাকা নেয়। ওর কিছু বখাটে বন্ধু-বান্ধবও আছে।'

রুমার বোন বলেন, 'ও একদম রাস্তার পাগলের মতো। কুড়িয়ে খাবারও খায়। আমাদের মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে বলে- আমি অমুক এলাকায়, মোবাইলে টাকা লাগবে। আমার একটু খাবার লাগবে।'

তিনি বলেন, 'এটা তো আবাসিক এলাকা। ভিআইপিদের এলাকা। প্রায় সব বাড়িতে সিসিটিভি আছে। আমার ধারণা, ওই ক্যামেরায় আংশিকভাবে রুমাকে দেখা যায়। এমনও হতে পারে ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে অন্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। ঘটনা এটাই।'

সাবিনা বলেন, 'ওই দিন ঘটনার পর আমি রুমাকে ফোন দেই। আমি শুনেছি- রুমা নতুন বাজার বা বাড্ডায় থাকে। ফোনে বললাম- গুলশানে ঝামেলা হচ্ছে, ওদিকে যাইস না। সে আমাকে বলে, আপা আমি তো ওখানেই ছিলাম। যে জায়গায় ঘটনা হয়েছে, ওইদিকে কিছুক্ষণ আগে বসে চা খেয়েছি।'

'চা শেষ করে যাওয়ার সময় বুঝতে পারি, ব্যাপারটা অনেক বড়। তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। ও এ রকম একটা মানুষ রাত-বিরাতে বের হয়ে যায়। নিজের প্রতি কোনো যত্নই নেয় না।’

সাবিনা জানান, গত নয় বছর ধরে রুমার এ অবস্থা। একবার কেরোসিন ঢেলে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, 'বোনটা ওদিকে ঘুরাঘুরি করছিল। তাই ধরা পড়েছে ফুটেজ ক্যামেরায়। এর ওপর ভিত্তি করে সবাই ওকে ধরছে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমার বোনটা মুক্তি পাক- এটাই চাই।'

সিসিটিভি ফুটেজের সেই নারী রুমা ছিল স্বীকার করলেও তার বোন সাবিনার দাবি, রুমা জঙ্গি নয়।

গুলশানের ঘটনায় নিজের মেয়ে গ্রেফতার হওয়ায় বিব্রত রুমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা শাহাবুদ্দিন বুদু মিয়া। তবে রুমা জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত নয় বলে তিনি মনে করেন।

ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করে শাহাবুদ্দিন বলেন, প্রকৃত অপরাধী হলে তাকে যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।

এইদিকে স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, স্বামীর সংসার হারানোর পর থেকে রুমা অস্বাভাবিক আচরণ করে। ইতিমধ্যে সে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে।

গ্রেফতারের বিষয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম (বিপিএম) জানিয়েছেন, ডিএমপি পুলিশের একটি দল শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুকি এলাকায় থেকে রুমা নামে একজনকে আটক করে। তবে এ অভিযানে নরসিংদী জেলা পুলিশ সম্পৃক্ত ছিল না।

উল্লেখ্য গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ১৭ বিদেশীসহ ২২ জন নিহত হন। এ ঘটনায় 'ছয় জঙ্গি'ও নিহত হয় বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।-যুগান্তর
২৩ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে