আল-আমিন: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কেমন যেন বদলে যেতে থাকে তাজউল হক রাশিক। লম্বা সময় ধরে বাসার বাইরে থাকা, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হতো যখন তখন। অবশ্য পরিবারের সদস্যরা প্রথম প্রথম বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলেন। চলতি বছরের ৬ই এপ্রিল হঠাৎ রাশিক চাকরির কথা বলে বাসা ছেড়ে চলে যায়।
এর কিছুদিন পরেই পরিবারের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে। এখন পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়রা হতবাক। কী থেকে কী হয়ে গেল? তাদের চোখে নম্র রাশিক যে বিপদগামী হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে তা তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
রাজধানীর ধানমন্ডির ১১/এ নম্বর রোডের ৭২ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতো রাশিক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সে একাধিক বেসরকারি কোম্পানিতে পার্টটাইম কাজ করেছে। গতকাল সকালে রাশিকের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ওই বাসায় তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের ভিড়। বাড়ির চতুর্থ তলায় রাশিকের বাবা রবিউল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম ও তার ছোট ভাই সবুজ থাকেন।
দুই ভাইয়ের মধ্যে রাশিক ছিল বড়। পুলিশ বাসায় গিয়ে রাশিক এবং তার পরিবারের লোকজনের খবর নিয়েছেন। রাশিকের নিখোঁজের পর তার পরিবার কেন জিডি করলেন না তার সন্তোষজনক জবাব পুলিশের কাছে দিতে পারেনি পরিবার। ওই বাসার নিচে নিহতের বাবা কাজী ফার্মের সাবেক কর্মকর্তা বয়োবৃদ্ধ রবিউল ইসলামের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমি আগ্রহী নই।
বাসার কেয়ারটেকার শফিকুল ইসলাম বলেন, পড়াশোনাকালীন রাশিক কয়েকটি কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে চাকরি করে। গত ৬ই এপ্রিল পরিবারকে বলে, তার চাকরি হয়েছে চট্টগ্রামের মীরেরসরাই এলাকায় একটি চায়না কোম্পানিতে।
এরপর ওই দিন রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল। তবে মাঝেমধ্যে সে ইন্টারনেটের নম্বর থেকে পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে বলতো সে ভালো আছে। পরিবারের সদস্যরা তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সে ফোনের লাইন কেটে দিতো।
পরিবারের লোকজনের ধারণা ছিল যে, সে হয়তো বাবা অথবা মায়ের সঙ্গে অভিমান করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহতের এক বন্ধু জানায়, রাশিক অত্যন্ত পড়ুয়া এবং ঘরমুখী ছেলে ছিল। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ার সময় তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ওই সময় রাজনীতির বিষয়ে তার কোনো ধারণাই ছিল না।
তবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার চালচালন এবং ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। সে রাজনীতি, ধর্ম ও আইন বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে তর্ক করতো। বাড়ি ছাড়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া সে কোনো কথা বলতো না। এমন একটি ছেলে কীভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিপদগামী হলো তা কেউ বুঝতে পারছে না।
ধানমণ্ডির থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, নিহতের পরিচয় উদঘাটন হওয়ার পরেই থানা পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। রাশিকের বিষয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করা হয়। তারা মধ্যবিত্ত পরিবার। তেমন অভাব ছিল না। রাশিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হওয়ার ঘটনায় নিহতের পরিবার অবাক হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, রাশিক নিখোঁজ হওয়ার পর কেন তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেন না। তারা তার কোনো সুদুত্তর দিতে পারেনি।-এমজমিন
২৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ