শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬, ০২:৫৯:৫৪

মগজধোলাইয়ের প্রশিক্ষক ছিল আবদুল্লাহ ও রায়হান

মগজধোলাইয়ের প্রশিক্ষক ছিল আবদুল্লাহ ও রায়হান

আহমদুল হাসান আসিক: গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় নৃশংস হামলার আগে সাত জঙ্গিকে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের দুর্গম চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তাদের প্রশিক্ষণ ও মগজধোলাইয়ের সার্বিক দায়িত্বে ছিল দু'জন। এর মধ্যে রায়হান কবির ওরফে তারেক কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত হয়।

সে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ছিল। হামলার জন্য বাছাই করা জঙ্গিদের 'মগজধোলাই' এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত করার দায়িত্ব ছিল কল্যাণপুরে নিহত আরেক জঙ্গি আবদুল্লাহর ওপর। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায়ও দুই প্রশিক্ষক বড় ধরনের হামলার জন্য একটি গ্রুপকে এভাবে প্রস্তুত করছিল।

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক রাকিবুল হাসান ওরফে রিগেনকে জিজ্ঞাসাবাদ, সেখান থেকে জব্দ করা নথিপত্র এবং সার্বিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ এখনও তাদের পরিবার নেয়নি।

এদের মরদেহ এখনও মর্গেই পড়ে আছে। এ ছাড়া জঙ্গিরা হামলার পর গুলশানের রেস্তোরাঁ থেকে বাইরে তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে 'থ্রিমা' নামে কোনো অ্যাপ ব্যবহার করেনি। তবে অন্য একটি মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করেছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।


এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশানে হামলার আগে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি রায়হান দু'জন প্রশিক্ষকের একজন। অন্যদিকে নব্য জেএমবি সদস্যদের ধর্মবিষয়ক শিক্ষা দিত নিহত আরেক জঙ্গি আবদুল্লাহ। মাদ্রাসায় পড়াশোনার কারণে সে খুব সহজেই ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিতে পারত। অনেকটা ধর্মীয় গৃহশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করত সে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রায়হান ও আবদুল্লাহ দু'জনই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। এর মধ্যে রায়হান বিভিন্ন হামলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সমন্বয়ের সার্বিক দায়িত্ব পালন করত। গত বছরের শেষ দিকে সে ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব নেয়।

তার নির্দেশনায় গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা পরিচালিত হয়েছে। দুটি ঘটনায় হামলাকারী সাতজনকে রায়হান এবং জেএমবির অপর একজন কমান্ডার সাদুল্লাহপুরের দুর্গম চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেয়। হামলাকারীদের সবাই বেশ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল।

এসব জঙ্গিকে প্রথমে রাজধানীর মিরপুরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ বছর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিরপুরে একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তারা রাজধানীকে অনিরাপদ মনে করে। ফলে তারা প্রশিক্ষণের জন্য দুর্গম অঞ্চলকে বেছে নেয়।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রায়হান সংগঠনে তারেক নামে পরিচিত ছিল। তাকে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল। সে আশুলিয়ার বাড়ৈপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত। ওই ঘটনার পর তারেক নামে জেএমবির এক সামরিক নেতার নাম ওঠে আসে।

কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়ার পর তাকেই তারেক বলে শনাক্ত করা হয়। পরে জানা যায়, তার প্রকৃত নাম রায়হান। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছায়। তার বাবার নাম শাহজাহান কবীর।

অন্যদিকে আবদুল্লাহ কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করার পর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে। তরুণদের সে খুব সহজেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পারত। জেএমবির আত্মঘাতী দল তৈরিতে মূল দায়িত্ব পালন করত সে। গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে সে দাড়ি কেটে ফেলেছিল।

গুলশানে হামলা ও কল্যাণপুরের ঘটনা তদন্তকারী সংস্থা সূত্র জানায়, অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি ইকবাল অন্যতম পরিকল্পনাকারী। ইকবাল তার ছদ্মনাম। তার প্রকৃত নাম কী তা বের করার চেষ্টা চলছে।

তদন্তে এরই মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা, প্রশিক্ষক ও আশ্রয়দাতাসহ অনেকের নাম বেরিয়ে এসেছে। কল্যাণপুরে অভিযানের আগে জঙ্গিরা ল্যাপটপ ও গোপন নথিপত্র ধ্বংস করলেও কিছু গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। এসব থেকে অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে। মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও অস্ত্র জোগানদাতাদের গ্রেফতারের চেষ্টার চলছে।

তদন্ত সূত্র আরও জানায়, জঙ্গি সংগঠনগুলো আত্মঘাতী দল তৈরি করতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে। তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে সংগঠন থেকে।

ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গি পরিবারকে মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গুলশানের হামলাকারীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কল্যাণপুরে নিহত আরেক জঙ্গি শনাক্ত: কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে গতকাল পর্যন্ত আট জঙ্গির পরিচয় মিলেছে। বুধবার নিহতদের আঙুলের ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে থাকা তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে সাতজনের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।

গতকাল রায়হান কবির ওরফে তারেকের পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। সে রংপুরের পীরগাছার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের শাহজাহান কবীরের ছেলে।-সমকাল

২৯ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে