দিনাজপুর থেকে : অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা আনতে তিন বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমান দিনাজপুরের বিরামপুরের রানা বাবু (২৬)। সেখানে যাওয়ার দেড় মাসের মাথায় সড়ক দু'র্ঘ'টনায় মা'রা'ত্মক আহ'ত হন। এরপর থেকেই তিনি কোমায়। বর্তমানে নিজ বাড়িতেই চলছে তার চিকিৎসা।
ছেলের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বাবা-মা। অভাবের তা'ড়নায় বছর খানেক আগে বোন আত্মহ'ত্যা করেছেন। রানার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্ত'বানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তার হ'তদরিদ্র বাবা-মা। তিন বছর ধরে কোমায় থাকায় রানা কথা-বার্তা বা ন'ড়াচ'ড়া করতে পারেন না। নলের মাধ্যমে চলে তার খাবারসহ যাবতীয় কিছু। উপজেলার পারভবানীপুর গ্রামের ভটভটি চালক আলম হোসেনের একমাত্র ছেলে রানা।
আলম বলেন, অভাব অন'টনের সংসারে সচ্ছলতা আনতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শেষ সম্বল জমি ব'ন্ধ'ক রেখে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধা'র করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ২০১৭ সালের ১৫ মে ছেলেকে ওমানে পাঠাই। যাওয়ার আগে বলা হয়েছিল ছেলে কারওয়াশের কাজ করবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ দেওয়া হয় তাকে।
তিনি বলেন, যাওয়ার কিছুদিনের মাথায় সে ফোনে বিষয়টি আমাকে জানায়। আর বলে ওই কাজ সে করতে পারবে না। সেই কথা চেয়ারম্যানকে বললে ছয় মাস পর কাজ পরিবর্তন করে দেওয়া হবে বলে জানান। যাওয়ার এক মাস ১৩ দিনের মাথায় ছেলের কোনও খোঁ'জ খবর পাচ্ছিলাম না। পরে লোক মারফত জানতে পারি সেখানে সড়ক দু'র্ঘ'টনায় মা'রা'ত্ন'কভাবে আহ'ত হয়েছে সে। সেখানেই বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ মাসের মতো চিকিৎসাধীন ছিল সে।
রানার বাবা বলেন, পরে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে ও সরকারি সহায়তায় ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রানাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। দেশে আসার পর প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানে রেখে ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় ওই বছরের ১৪ মে ঢাকা থেকে বাড়িতে আনা হয়। এখন বাড়িতেই চলছে তার চিকিৎসা।
আলম বলেন, সে বিদেশে দু'র্ঘ'টনায় আহ'ত হলেও সেসময় কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩২ লাখ টাকা ক্ষ'তি'পূরণ ও ইন্সুরেন্সের টাকা দেওয়ার কথা বললেও আজ পর্যন্ত কোনও ক্ষ'তিপূ'রণ পাননি। বর্তমানে মানুষের কাছ থেকে ধা'র-দে'না, যাকাত-ফিতরার টাকা দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করে যাচ্ছি। নিজেরা না খেয়ে তাকে খাওয়াচ্ছি। আশায় আছি আবারও আমাদের ছেলে সুস্থ হয়ে বাবা বলে ডাকবে। কিন্তু চাহিদা মতো ওষুধপত্র বা চিকিৎসা করাতে পারি না।
রানার মা মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ''আমার দু'টি সন্তান। এক ছেলে এক মেয়ে। গত বছর মেয়েটি আমার মা'রা গেছে। ছেলেটি বেঁচে থেকেও মৃ'ত। ছেলেকে নিয়ে খুব ক'ষ্ট করে কোনোরকমে চলি। আমাদের তো আর কেউ নেই। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে চাইতে এখন আর তেমন কেউ আমাদের খোঁ'জ-খবর নেয় না। এমনকি আমার বাবা-মাও আর আসেন না। ডাক্তার বলেছেন, তাকে ভারতে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না। তাই প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্ত'বানরা যদি আমাদের দিক একটু মুখ তুলে তাকাতো তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো।''
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা.আরিফুজ্জামান মিলন বলেন, ''উন্নত চিকিৎসা পেলে রানার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। তার মাথায় গু'রু'তর আ'ঘা'ত লাগায় সেল ড্যামেজ হয়ে গেছে। এটাকে আমরা ভেজেটেবজ স্টেজ বলি। এটার পরিণতি খুব একটা বেশি ভালো নয়। ছেলেটা বেঁচে থাকবে কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ থাকবে না। পরিবারের ইচ্ছে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার। উন্নত চিকিৎসা পেলে কিছুটা ঠিক হবে তবে আশানুরূপ হবে বলে মনে হয় না।''