নিউজ ডেস্ক : করোনায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের হিলিতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এ অবস্থায় স্বেচ্ছাশ্রম ও গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় গ্রামবাসীর জন্য ২৫০ ফুট লম্বা একটি কাঠের সেতু তৈরি করে দিলেন ছাত্ররা। এর ফলে কয়েক গ্রামের মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারায় খুশি। তবে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবি ছাত্র, গ্রামবাসী সবার।
হিলির আলিহাট ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে তুলশিগঙ্গা নদীর ওপরে ছাত্ররা এই কাঠের সেতুটি নির্মাণ করেন। আলিহাট ইউনিয়নের শেষ প্রান্তের গ্রাম কাশিয়াডাঙ্গা। পাশেই রয়েছে একই ইউনিয়নের বাশমুড়ি গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝে সংযোগস্থলে রয়েছে তুলশিগঙ্গা নদী। যেখানে দীর্ঘদিনেও ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় দুই গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে পানি-কাদা ভে'ঙে কিংবা অনেক দূর দিয়ে ঘুরে বিপরীত সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করতে হতো। এটা ছিল তাদের জন্য চ'রম দুর্ভোগের।
কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল করিম বলেন, দাদার আমল থেকে শুনে আসছি এখানে বিজ্র হবে। ব্রিজ হতে হতে ৭০-৮০ থেকে দাদারা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এরপর আমার বাবা-চাচারা আসলো, তারাও বললো ব্রিজ হবে। এই এমপি গিয়ে ওই এমপি আসছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ক'ষ্ট ভো'গ করছি। ব্রিটিশ আমলে কাঠের সেতু হলেও সেটি ন'ষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
সেতু পার হচ্ছেন গ্রামবাসী স্থানীয় সিদ্দিক হোসেন ও রহিমা বিবি বলেন, আগে নদী ভরা ছিল। কোনও নৌকা ছিল না। মানুষের অনেক অসুবিধা হচ্ছিল। একইভাবে পাশের গ্রামে স্কুল-মাদ্রাসা থাকায় বন্যা হলে ছেলেমেয়েদের স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে খুব সমস্যা হতো। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি কেউ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না। এবার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের ছেলেরা, যারা বিভিন্ন স্থানে পড়ালেখা করেন তারা উদ্যোগ নিয়ে গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় কাঠের সেতু নির্মাণ করেছেন। এতে অত্র অঞ্চলের রোগী নিয়ে যাওয়াসহ মানুষের যাতায়াতে অনেক সুবিধা হবে। আগে আমরা খুব বিপদগ্রস্ত ছিলাম, এখনও বিজ্রের দুই পাশে যে কাদা রয়েছে, চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ তা দেখেন না।
ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোক্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসির উদ্দিন, নাসির উল্লাহ ও চীনে অধ্যয়নরত আনাছ আহমেদ জানান, করোনার কারণে প্রায় ৬ মাসে ধরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ফলে এই গ্রামের ছেলেরা যারা বাইরে পড়ালেখা করতাম সবাই ছুটি পেয়ে বাড়িতে বসে ছিলাম। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম গ্রামের তুলশিগঙ্গা নদীর ওপরে ব্রিজ নির্মাণ হবে, হচ্ছে। কিন্তু তারপরও হয় না। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর উপকারের কথা চিন্তা করে আমরা এখানে ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নিই। বিত্তবান থেকে শুরু করে গ্রামের সবাই আমাদের অর্থ দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, গাছ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ব্রিজটি নির্মাণ করতে ২৫০টির মতো গাছের গুঁ'ড়ি লেগেছে। এর সঙ্গে কাঠ দিয়ে দীর্ঘ ৪৫ দিন ধ'রে কাজ করে ব্রিজটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এই ব্রিজটি যেহেতু ক্ষণস্থায়ী তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দা'বি এখানে যেন একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।