ফজিবর রহমান বাবু: সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি বলেছেন, আমি কবি নই, আমি কবিদের ঈর্ষা করি। কবিতা পড়ার সময় আমারও কবি হওয়ার স্বাদ জাগে। কবিদের ভাবনা, আবেগ, চিন্তা, দর্শন থাকে সেগুলো উচ্চারন করার চেষ্টা করি। কখনো কখনো হয়তো মেলেনা।
একসাথে এতজন কবির মিলনমেলা দেখে আবিভুত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, কবিতা তারাই লিখতে পারেন যারা জীবনের চলার গতিতে গা ভাসিয়ে থাকেন কিন্তু প্রতি পদে পদে জীবনটাকে আবিস্কার করেন। একজন বিজ্ঞানী আবিস্কার করেন, কিন্তু একজন কবি বিজ্ঞানীর অনুসন্ধানী চোখের মত করে দেখেন পাশাপাশি সেটিকে এমনভাবে প্রকাশ করেন যাতে মানুষ অনুপ্রানীত হয়, উৎসাহিত হয়। সমাজ পরিবর্তনের অনেক বার্তা পেয়েছি এই কবিতার মাধ্যমে।
সাহস পেয়েছি কবিতার পঙ্গতি থেকে। এজন্য কবিদের প্রতি আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। বিবেকের সাথে প্রতারনা করে এটি কবিদের পক্ষে সম্ভব না, সৃজনশীল মানুষের পক্ষে সম্ভব না। সারাদেশেই যদি এমন হতো সবাই কবিতার চর্চ্চা করে তাহলে বাংলাদেশের যে বর্তমান সংকট তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠা সম্ভব হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিয়ে গেছেন। ৯ মাসের যুদ্ধে তিনি স্বশরীরে ছিলেন না, কিন্তু তার অনুপস্থিতি আমরা উপলব্ধি করতাম না।
মনে করতার তার আদর্শ আমাদের সাথেই আছে। ওই সময়ে যেসব যুবকরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলতেন শেখ সাহেব বলেছেন, শেখ সাহেব মুক্তি এনে দিবেন। আমরা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হারিয়েছি, এরপর দেশ উল্টো পথে হেটেছে।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সেই দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করছেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা প্রতি মুহুর্তে বিভেদ সৃষ্টি করে, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে, মৌলবাদের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতে চেয়েছে। দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আবার বাংলাদেশকে একটি অস্থির অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
যারা জঙ্গি তারা আমাদের ঘরেরই সন্তান। তারা কি বুঝে, কিসের লোভে এমন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে আমরা তা জানার চেষ্টা করি না। শুধু আমরা এটাই বলতে পারি তারা বাঙালী সংস্কৃতির স্বাদ পায়নি, যদি পেত তাহলে তারা বিপথে যেতো না।
শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি ২০২২) বিকেলে দিনাজপুর বীরগঞ্জ গোলাপগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে মাঠে আয়োজিত মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও ‘শব্দশর’ সাহিত্য সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি আন্তর্জাতিক সাহিত্য উপলক্ষে “শুদ্ধস্বরে শব্দশর” শ্লোগানে কবি, সাহিতিক ও গবেষকদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ‘শব্দশর’ সাহিত্য সংগঠনের সভাপতি কবি বাবুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শব্দশরের প্রধান উপদেষ্টা ও দিনাজপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।
এ সময় তিনি বলেন, জন্ম সকলেই নেয়। জন্মের পরই সে প্রাণী হয়। জন্ম নেবার পরে মনুষ্যত্ব, মানবিকতাকে বিকশিত করবার জন্য যে চর্চ্চাটি দরকার সেটিই হচ্ছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চ্চা। এই চর্চ্চা ছাড়া একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠা কঠিন। যারা সত্যিকার অর্থে সংস্কৃতিককে লালন করেন তারা কখনো পাপ করতে পারেন না। এই অঙ্গনটি আমাদের দেশ ও উপমহাদেশের আন্দোলনের জন্য একটি অপুরনীয় ভুমিকা রেখেছিলো।
বঙ্গবন্ধুর প্রশ্ন ‘প্রেসিডেন্ট কি লুঙ্গি-গেঞ্জি পড়ে ছবি তোলে’? এমন প্রশ্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছবি ধারন করা একুশে পদকপ্রাপ্ত ও আর্ন্তজাতিক খ্যাতসম্পন্ন ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমানকে। সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত ও আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান বলেন, সেদিন ছিল ১৯৭৫ সালের ১৩ই জুলাই। সন্ধ্যায় ১৭ বছর বয়সী পাভেল রহমান গিয়েছিলেন তার বাড়িতে শেখ কামালের সাথে দেখা করতে।
হঠাৎ করেই চোখের সামনে দেখতে পান লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরিহিত বঙ্গবন্ধু পাইপে করে তামাক টানছেন। তিনি তৎক্ষানাৎ বাবার দেয়া ক্যামেরা বের করে সকলের অগোচরে বঙ্গবন্ধুর দিয়ে ছবি তোলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু চমকে উঠেন এবং গম্ভীর গলায় বলেন কে রে? এ সময় পাশের একজন বলেন ও আমাদের পাভেল। ঠিই এ সময়ই বঙ্গবন্ধু পাভেলকে জিজ্ঞাসা করেন তুই জানিস আমি কে? পাভেলের সাদামাঠা জবাব- হ্যা জানি তো আপনি বঙ্গবন্ধু।
সম্মানীত অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কার্টুনিষ্ট ও চিত্রশিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্য, কবি ও ছড়াকার অধ্যাপক জলিল আহমেদ, কবি ও গবেষক বীরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাসুদুল হক, কবি ও গবেষক দিনাজপুর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল বিশ্বাস, কবি ডাক্তার জোবাইদুর রহমান, শব্দশরের সাধারন সম্পাদক লাল মিঞা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আগে আগত অতিথিদের মধ্যে ক্রেষ্ট ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। এছাড়াও আগত সকলকে বই উপহার প্রদান করা হয়। পরে শব্দশর সাহিত্য সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।