দিনাজপুর : প্রচন্ড শীতে খোলা আকাশের নীচে পলিথিন তাঁবু বানিয়ে করুণ জীবন-যাপন করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের আওলাখুড়ী হঠাৎ পাড়া গ্রামের ৮টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। শুক্রবার দুপুরে ২ টার দিকে ঢাকাস্থ বীরগঞ্জ সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে তাদের মাঝে শীত বস্ত্র কিতরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আগুন লেগে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নিজপাড়া ইউনিয়নের আওলাখুড়ী হঠাৎ পাড়া গ্রামের ৮টি পরিবারের ঘর, আসবাবপত্র, ছাগল, হাঁস-মুরগী, চাল-ডাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারপর থেকে তারা খোলা আকাশের নীচে পলিথিন তাঁবুতে বসবাস করছেন।
বীরগঞ্জ সমিতির সভাপতি আনোয়ার পারভেজ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করার চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে। আমরা তাদের মাথা গোজানো ঠাই করা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। সমাজের সবাইকে নিয়ে সবার আগে তাদের ঘর মেরামত করা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এরপর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সমস্যার সমাধান করতে চাই। তারপর যদি সহযোগিতা লাগে তাহলে বীরগঞ্জ সমিতি বিষয়টি দেখবে।
পলিথিন তাঁবুতে ৮ পরিবারের করুণ জীবনঅগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ সহির আলী জানান, সহায় সম্বল যা কিছু ছিল সব আগুনে পুড়ে গেছে। শুধু পরনের কাপড় ছাড়া কিছু রক্ষা করা যায়নি। ঘরের চাল, ডাল, গরু-ছাগল এবং হাস-মুরগী সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ৪ দিন ধরে খোলা আকাশে পলেথিন তাঁবু বানিয়ে রাত্রী যাপন করলেও সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য পাইনি। ঘটনার পর এখানে আসেনি কোন সরকারী কর্মকর্তা। তবে প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী সহযোগীতা আজীবন মনে থাকবে।
ক্ষতিগ্রহস্ত পরিবারের সদস্য আমিনা কমির বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী রুবিনা আকতার জানান, আগুনে সব বই পুড়ে গেছে। এখন আগামী দিনে আর পড়াশুনা করতে পারবো কিনা সন্দেহ। এমনিতেই মেয়ে হিসেবে পড়াশুনা করা কঠিন। তারপর আবার সবকিছু নতুন করে কিনতে হবে। এখন ঘরবাড়ি তৈরী করবে না বই-খাতা কিনে দেবে। তাই আর পড়াশুনা করা হবে না।
পলিথিন তাঁবুতে ৮ পরিবারের করুণ জীবনপ্রতিবেশী রেজাউল করিম জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরে এলাকাবাসী তাদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করে। স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের বিত্তবানরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির জন্য চাল এবং শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করে। তাদের প্রাপ্ত চাল এবং প্রতিবেশীদের কাছে এক কেজি করে চাল এবং সাধ্যমত সবজি দিয়ে প্রতিদিন পরিবার গুলির খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পলিথিন কিনে তাঁবু বানিয়ে তাদের সাময়িকভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকার জানান, তাদের মানবিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সরকারীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কর্তৃক তার মারফতে ২৮টি কম্বল প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এগিয়ে এসছেন।
১৫ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ