শাহ্ আলম শাহী : পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দিনাজপুরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা। বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত তেল ও রং ছাড়া মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়েও প্রতিকার হচ্ছে না তাতে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিনাজপুর জেলা বেকারি মালিক সমিতি।
তাদের দাবি, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে যারা লাচ্ছা তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। তা না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আকর্ষণীয় মোড়কে মোড়ানো, দেখতে সুন্দর এসব লাচ্ছা দেখে বোঝার উপায় নাই, এসবে ব্যবহার হচ্ছে বিষাক্ত তেল এবং রং ছাড়া মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান। এসব লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাগুলোতে লাচ্ছা উৎপাদনের নামে চলছে, জনস্বাস্থ্য ধ্বংসের তৎপরতা।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে দিনাজপুর জেলা বেকারি মালিক সমিতি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বৈধ ও অবৈধ লাচ্ছা সেমাই তৈরি প্রতিষ্ঠানের তালিকাও দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে। দিনাজপুর জেলা বেকারি মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, দিনাজপুরে ট্রেড লাইসেন্স বিএসটিআই আয়কর প্রদানকারী লাচ্ছা সেমাই তৈরির বৈধ প্রতিষ্ঠান ২৭টি। আর ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই লাইসেন্স না নিয়ে আয়কর প্রদান না করে অনুমতিবিহীন নিম্নমানের লাচ্ছাসহ পণ্য উৎপাদনকারী অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯টি।
তিনি বলেন, এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, দিনাজপুর শহরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব পাশ্বে উৎসব ফুড অ্যান্ড বেকারি, দিনাজপুর শহরের পশ্চিম উপকণ্ঠ কাঞ্চন ঘাট হঠাৎ পাড়ার আলী চানাচুর, কাঞ্চনঘাট এলাকার গফফার চানাচুর, ৪নং উপশহরে মধু চানাচুর, ৪নং উপশহরে মুন্না চানাচুর, সুইহারী এলাকার গাজী চানাচুর, দক্ষিণ কোতোয়ালির ফুলতলা বাজার এলাকার রোস্তম ফুড লাচ্ছা, ফুলতলা স-মিলের পেছনে জাফর ফুড লাচ্ছা, কমলপুর বাজার এলাকায় হাকিম মৌলভী ফুড লাচ্ছা, ফুলবাড়ী উপজেলার জলাপাড়ায় মোস্তাকিম লাচ্ছা, জলাপাড়ায় চিকা বাবু লাচ্ছা, কাজীপাড়া রোডে বজলী বেকারি লাচ্ছা, কাজীপাড়া রোডে খোকন লাচ্ছা, কানাহার রোডে নরশেদ লাচ্ছা, চকচকা রোডে বেবাল লাচ্ছা, মহেশপুর রোডে হিটু লাচ্ছা, মাদিলা হাট এলাকায় মাদিলা বেকারি লাচ্ছা, কাজী পাড়া রোডে খতিবর লাচ্ছা, গড় ইসলামপুর জলপাড়া এলাকায় বাশার ফুড লাচ্ছা, বিরল উপজেলার ধুকুরঝাড়িতে ভাই-বোন বেকারি লাচ্ছা, বীরগঞ্জ উপজেলায় ইত্যাদি বেকারি লাচ্ছা, পার্বতীপুর উপজেলার ভাগলপুরে ফয়সল ফুড লাচ্ছা, নবাবগঞ্জ উপজেলায় কচুয়া এলাকায় বেলালা শাহ্ লাচ্ছা, চিরিরবন্দর উপজেলার ঘুঘরাতলী এলাকায় আজাদ বেকারি লাচ্ছা, বিরামপুর উপজেলা চণ্ডীপুর এলাকায় সাত ভাই বেকারী লাচ্ছা, কাটলা এলাকায় স্বাধীন বেকারি লাচ্ছা এবং হাকিমপুর (হিলি) উপজেলায় হাকিমপুর বাজারে পাবনা বেকারি লাচ্ছা ও ডাঙ্গা পাড়া এলাকায় রজনী বেকারি লাচ্ছা। যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাগুলোতে লাচ্ছা উৎপাদনের নামে চলছে, জনস্বাস্থ্য ধ্বংসের তৎপরতা। সেমাই তৈরীতে যে ময়দা, তেল, রং মেশানো হচ্ছে, তা সব কিছুতেই বিষাক্ত উপাদান। ময়দা মাখানো খমিড়ের কাজ চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পা দিয়ে মাড়িয়ে। এসব কারখার অধিকাংশই নেই বিএসটিআই’র অনুমোদন। কারখানার বাইরে থেকে প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অথবা গেটে তালা ঝুলিয়ে বা গেট বন্ধ করে চলছে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কাজ।
এ ব্যাপারে বেকারি মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, আমরা সনাতন পদ্ধতিতে পা দিয়ে মাড়িয়ে লাচ্ছা তৈরি বর্জন করেছি। তাই অনেকে এখন মেশিন দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে। যারা বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর হস্তক্ষেপ গ্রহণ করুক, এটা আমরা চাই। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ফাঁকি দিতে অধিকাংশ লাচ্ছা তৈরির কারখানায় রাতের আঁধারে ময়দা খামিরের কাজ করছে শ্রমিকরা। আর সারাদিন চলছে লাচ্ছা তৈরি ও ভাজার কাজ। তবে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বাঁচতে চাই। তাই চাই, বিষমুক্ত খাবার। এজন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। প্রতিরোধ গড়তে হবে বিষযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে। তাই, স্থানীয় প্রশাসন প্রতিনিয়ত লাচ্ছা সেমাই তৈরীর কারখানাগুলোতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান মেশানো বা অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে লাচ্ছা তৈরি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।-এমজমিন
১২ জুলাই, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে