শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:০২:৪১

ভূত মেলা!

 ভূত মেলা!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : কেউ দুলে দুলে মাটিতে মাথা ঠুকছে, কেউ আবার নিজের মাথার চুল কেটে সামনে জ্বলতে থাকা আগুনে ছুড়ে ফেলছে।  কেউ মানুষের খুলি নিয়ে পুজো করছে।

ভূত, প্রেত, ডাইনিদের ‘মোকাবিলা’র আস্ত একটা বাজার।  এখানেও স্টল রয়েছে।  কয়েকশ' ওঝা, গুণিন দোকান খুলে বসেছে এখানে। ঝাড়খণ্ডের পলামু জেলার নওডিহি থানা এলাকার সরাইডিহি গ্রাম। ঝড়িয়া নদীর ধারে। কয়েক হাজার মানুষের ভিড় এই মেলায়। মেলার নামও দেয়া হয়েছে ভূত মেলা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তথাকথিত ডিজিটাল ইন্ডিয়া থেকে কয়েক লাখ যোজন দূরের এই জগত।  সাধারণ গ্রামের মানুষের বদ্ধ কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসই এই ভূত মেলার ভিত্তি।  তা বিক্রেতাদেরও মূলধন।

স্থানীয় গ্রামবাসীদের কথায়, সরাইডিহিতে এই মেলা এবারই প্রথম বসলেও এই এলাকায় ভূত মেলা নতুন কিছু নয়।  পলামুর হায়দারনগরে প্রতিবছর দশেরার পরে বসে ভূত মেলা।  দিনে গড়ে আট থেকে দশ হাজার মানুষ ভিড় করেন সেখানে।  

শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয় আশপাশের জেলা, এমনকী বিহার থেকেও মানুষ আসেন এখানে।  কেউ আসেন ভূত ঝাড়াতে, কেউ আসেন বশীকরণ দ্রব্য কিনতে, কেউ বা আসেন গ্রামে ডাইনির খোঁজে।  শুধু ওঝাই নয়, মেলায় থাকেন হাতুড়েরাও।  হায়দার নগরের ভূত মেলার সাফল্য দেখেই এবার সরাইডিহিতেও পুজোর আগে আসর জমিয়েছে ভূত মেলা।

অন্যবার পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকলেও এবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।  গতকাল মেলা বন্ধ করতে গিয়ে ‘গণবিক্ষোভ’ সামলাতে গুলিও চালাতে হয় পুলিশকে। পলামুর জেলাশাসক কে শ্রীনিবাসন বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারলাম স্থানীয় মুখিয়া ও কয়েক জনের উদ্যোগে এই ভূত মেলা সরাইডিহিতে বসতে চলেছে তখনই তা বন্ধ করার নির্দেশ দিই।  কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মেলা বসে এবং চলতে থাকে।  তাই মেলা বন্ধ করতে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হই।’

তবে গতকাল মেলা বন্ধ করতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়ে পুলিশ।  পুলিশের বন্দুক কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে মেলায় উপস্থিত জনতা।  শেষ পর্যন্ত পুলিশকে গুলি চালাতে হলো।  রফিক আহমেদ নামে এক যুবক পুলিশের গুলিতে মারাও যায়।  

এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি আইন করে বা পুলিশ দিয়ে বন্ধ করা যাবে এই কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের মেলা? এডিজি এস এন প্রধানের কথায়, ‘সেটা পরের কথা। কিন্তু এই মেলা কোনওভাবেই চলতে দেয়া যাবে না। এখান থেকে নানা অপরাধেরও জন্ম হচ্ছে।  রমেশ ভূইয়া নামে এক ওঝাকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

প্রতিবছর ডাইনি অপবাদে ঝাড়খণ্ডে শতাধিক মহিলা-পুরুষকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটে।  সাপে কামড়ালে বা অসুখ করলে গ্রামবাসীরা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ওঝাদের কাছে দৌড়ান।  ভূত ভর করেছে এ অপবাদে মানুষকে নানা ধরনের অমানবিক শাস্তি দেয়া হয়।

প্রশ্ন উঠেছে, এর জন্য সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো সচেতনতা সৃষ্টি করতে কেন তেমনভাবে উদ্যোগী হচ্ছে না? কেন এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোও নীরব? সূত্র : আনন্দবাজার
৮ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে