এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ওসামা হাসান। বয়স মাত্র দুই বছর। ঘরে-উঠোনে দৌড়ঝাঁপ দিয়েই যার দিন পার হওয়ার কথা। অথচ ঘরের কোণে শুয়ে প্রহর গুনছে নির্মম পৃথিবীকে ছেড়ে যাওয়ার। অসহায় তার পরিবার। যুদ্ধের দামামায় ওসামার জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার অর্থ নেই তাদের। দিনে একমুঠো খাবার জোগাড় করাই যেখানে দায়।
নিরুপায় হয়ে ওসামার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনি পরিবার তার জীবনের চেয়ে একবেলা খাবারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে ইয়েমেনের এমন নির্মম চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি কাঠের খাটে শুয়ে আছে শিশু ওসামা। আকাশের দিকে পলকহীন দৃষ্টি তার। অপুষ্টি ও অনাহারে তার শীর্ণ দুটি পায়ে আর দশটা শিশুর মতো হেসেখেলে বেড়ানোর শক্তি নেই। নেই পৃথিবীটাকে মায়ার জালে জড়িয়ে আপন করে দেখার মতো সামর্থ্য। জীর্ণ ঘরের কোণে পড়ে থাকা ওসামাকে অশ্রুসিক্ত চোখে দেখছিলেন দাদা আহমেদ সাদেক।
তিনি বলেন, ‘আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। আমি জানি সে মারা যাচ্ছে।’ চলতি বছরই তার স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। পরিবারের সামর্থ্য নেই ভালো ফল, শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানোর। তবে একটু-আধটু ছাগলের দুধ ও বিস্কুট খাওয়ানো হচ্ছে তাকে। তবে অস্বাস্থ্যকর পানি ও স্যানিটেশনের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলছে।
গল্পটি ওসামার একার নয়। ইয়েমেনের গ্রামাঞ্চলের সব শিশুই এখন এমন বাস্তবতার মুখোমুখি। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই বাস করে গ্রামে। অর্থাভাবে সেখানকার বাসিন্দারা এখন অসুস্থ শিশুদের বাঁচানোর চেয়ে সুস্থদের টিকিয়ে রাখার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন। গ্রামগুলোর কবরস্থানে মৃত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেসব শিশুর পরিবার একটু সচ্ছল, তারা তুলনায় কিছুটা হলেও ভাগ্যবান। অন্তত হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে তাদের। তবে কয়েক ঘণ্টার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে গিয়ে আর সেখানকার খরচ পরিশোধ করার পর পরিবারগুলোর কাছে কিছু থাকে না বললেই চলে। ফলে আবারও অপুষ্টিতেই ভুগতে থাকে শিশুরা।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন। ২০১১ সালে আরব বসন্তের পর দেশটির অবস্থা আরও শোচনীয় হতে থাকে। এরপর ২০ মাসের গৃহযুদ্ধ দেশটিতে একধরনের দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে। জাতিসংঘের এক জরিপ অনুসারে, ইয়েমেনে ৩ লাখ ৭০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে সাহায্যের প্রয়োজন আরও প্রায় ২০ লাখ শিশুর।
০২ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম