বৃহস্পতিবার, ০৪ মে, ২০১৭, ০৯:৫১:৫০

নরেন্দ্র মোদিকে এক বাংলাদেশি যুবতীর মর্মস্পর্শী চিঠি!

নরেন্দ্র মোদিকে এক বাংলাদেশি যুবতীর মর্মস্পর্শী চিঠি!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাংলাদেশের এক গার্মেন্ট কারখানায় মাসে নয় হাজার টাকার সামান্য বেতনে কর্মরত, বিবাহ-বিচ্ছিন্ন আয়েশাকে (নাম পরিবর্তিত) ভারতে মোটা টাকার চাকরির লোভ দেখিয়েছিল তারই এক সহকর্মী। তার কথায় ভরসা করে, বাবা-মাকে কিছু না বলেই দালালকে ধরে মুম্বাইতে পাড়ি দেয় আয়েশা।

কিন্তু সেই সহকর্মী তাকে মুম্বাইয়ের ভাসিতে এনে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকায় বেচে দেয় এক নেপালি মহিলার কাছে। ওই নেপালি মহিলা একটি কোঠি বা নিষিদ্ধপল্লী চালাতেন। তারপর আয়েশাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই পেশায় নামানো হয়।

মুম্বাই থেকে ব্যাঙ্গালুরু, নানা শহরের অন্ধকার পল্লী ঘুরে ও একাধিকবার হাতবদল হয়ে শেষে তার ঠিকানা হয় পুনের বুধওয়ারপেট রেড লাইট এরিয়া। ওই এলাকার কাটরাজ ঘাট থেকেই কিছুদিন আগে পুনে শহরের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এরপর আয়েশার আশ্রয় জোটে রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে।

ওই সংস্থার কর্মীরাই মুম্বাইতে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে আয়েশার নাম-ঠিকানা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিচয় দিয়েছেন। আর নিয়ম অনুযায়ী যাচাই করার পর আয়েশাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থাও করা গেছে বেশ তাড়াতাড়িই। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মে আয়েশা বাংলাদেশে ফিরেও যাবে।

এই পর্যন্ত আয়েশার গল্প আরও হাজার হাজার অসহায় বাংলাদেশি নারীর মতোই। ভারতে একটু ভালো কাজের সন্ধানে এসে এদের বেশিরভাগই অন্ধকার জীবনের পাঁকে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু আয়েশার গল্পে একটা ছোট্ট মোচড় আছে। আর তা হলো ভারত থেকে বাংলাদেশে রওনা হওয়ার আগে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি মর্মস্পর্শী চিঠি লিখেছেন!

আর সেই চিঠিটা হল, তার কাছে ভারতে গ্রাহকদের কাছ থেকে টিপস হিসেবে পাওয়া সামান্য কটা টাকা জমেছিল, কিন্তু সেই সঞ্চয়ের বেশিটাই পাঁচশ’ আর হাজার রুপির পুরানো নোটে, যা বাতিল হয়ে গেছে। বহু কষ্টে আর কলঙ্কের বিনিময়ে রোজগার করা সেই হাজার দশেক রুপি যদি প্রধানমন্ত্রী মোদি বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, আয়েশা চিরকৃতজ্ঞ থাকবে!

এই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া চিঠিটা হিন্দিতে অনুবাদ করে দিয়েছে রেসকিউ ফাউন্ডেশনের কর্মী রূপালি শিভারকর। তারপর হাতে লেখা সেই চিঠিটি কয়েকদিন আগে আয়েশা টুইট করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে।

মোদি আর সুষমা দুজনেই নিয়মিত টুইটার ফলো করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো টুইটার দেখে বিদেশের নানা প্রান্তে বিপদে পড়া ভারতীয়দের বহুবার উদ্ধার করেছেন। কাজেই এখানে ঘরের পাশে বাংলাদেশের একটি মেয়ে যখন ভারতে এসে এমন অসহায় অবস্থায় পড়েছে, তিনি কি তাকে এটুকু সাহায্য করবেন না? বুকে এই আশা নিয়েই চিঠিটি লিখেছে আয়েশা এবং তার বিশ্বাস এই আবেদন ভারতের ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছাবে।

এনডিটিভি, মুম্বাইয়ের মিড-ডে, আইবিএনের মতো বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও আয়েশার এই আর্তির কথা প্রকাশিত হয়েছে। ফলে দশ-বারোদিন পর আয়েশার বাংলাদেশে ফেরার আগেই মোদি বা সুষমা স্বরাজ একটা কিছু সুরাহা করবেন বলেও মেয়েটি আশা করছে।

রেসকিউ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ত্রিবেণী আচার্য বুধবার বলছিলেন, ‘আমরা যখন পুলিশের সাহায্য নিয়ে আয়েশাকে উদ্ধার করি, যৌনপল্লী থেকে কার্যত এক বস্ত্রে তাকে চলে আসতে হয়েছিল। তারপর কোর্ট-কাছারি-দূতাবাসে দৌড়োদৌড়িতে ওর জিনিসপত্র সেখান থেকে নিয়ে আসার কোনও সুযোগই হয়নি।’

‘পরে যখন ও বলল কিছু টাকাপয়সা ওখানে লুকিয়ে রেখে এসেছে, তখন আবার সেখানে হানা দিয়ে আমরা একটা তোরঙ্গের ভেতর কাপড়ের ভাঁজে এই লুকিয়ে রাখা বারো-তেরো হাজার টাকা খুঁজে পাই!’

চিঠিতে আয়েশা জানিয়েছে, ব্যাঙ্গালুরুর নিষিদ্ধপল্লীতে কাজ করার সময় মালিকরা তাকে একটা পয়সাও হাতে দিত না। কিন্তু গ্রাহকরা খুশি হয়ে যে টিপস দিতেন, সেটা লুকিয়ে পেটিকোটের ভাঁজে গুঁজে রেখেই তিল তিল করে এই পয়সাটা সে জমিয়েছে।

কিন্তু, সেই টাকাটা উদ্ধার হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তার বেশিটাই পুরানো ৫০০ বা হাজার রুপির নোটে, যার মোট পরিমাণ দশ হাজার রুপির মতো। ইতোমধ্যে গত ৩১শে ডিসেম্বর এই নোট বদলানোর সময়সীমা পেরিয়ে গেছে, কাজেই আয়েশার কষ্টার্জিত এই রোজগার এখন প্রায় পুরোটাই বাতিলের পর্যায়ে।

পুনের কাটরাজ ঘাট নিষিদ্ধপল্লী থেকে আয়েশাকে উদ্ধারের সময় ব্যক্তিগতভাবে বড় একটা ভূমিকা পালন করেছিলেন শহরের পুলিশ কমিশনার রশ্মি শুক্লা। তিনি এদিন এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘অসহায় বাংলাদেশি মেয়েটির এত কষ্টে পাওয়া টাকাগুলো বাতিল হয়ে গেছে জেনে ভীষণ খারাপ লাগছে। ওর চিঠিটা পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার হয়তো কিছু ব্যবস্থা নেবে। আর যদি তা সম্ভব না-ও হয় আমরা দেখব কীভাবে বাংলাদেশ যাওয়ার আগে ওর হাতে আমরা কিছু টাকা তুলে দিতে পারি!’

দশ হাজার রুপি হয়তো টাকার অঙ্কে অনেকের কাছেই খুব একটা বড় কিছু নয়, কিন্তু আয়েশার কাছে তার দাম অনেক। আর দেশে ফেরার আগে ভারত যদি তাকে সত্যিই তা বদলে দিতে পারে, সেটা অবধারিতভাবে বাকি জীবনে তার কাছে অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে!

৪ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে