এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: অনেকেরই জীবনের শুরুটা তো শূন্য থেকেই হয়। আবার কেউ সেনার চামচ মুখে দেওয়ার মতো করে কোটিপতি থেকে হন আরো কোটি টাকার মালিক। তবে প্রেম গণপথির শুরুটাও একে বারে শূন্য থেকেই হয়ে ছিল। কিঞ্চিত্ কানাকড়ি সঙ্গে ছিল, তাও আবার রাস্তার পাশের খোওয়ার দোকান দিয়ে। সেখান থেকে, নিঃসঙ্গ পকেটে সেই যে শুরু, আজ ৩০ কোটি টাকার মালিক সেই প্রেম।
তখন তো সবে ১৭, কাজের ধান্দায় ট্রেনে চেপে মুম্বাইয়ে। যে ভাবে আর পাঁচ জন এসেছে বাণিজ্যনগরীতে, সেই পথ ধরেই আসা তারও। কিন্তু, সময় সায় না দিলে যা হয়! যা হাত দেবেন, তাই পণ্ড। প্রেম গণপথিরও তাই হল। পকেটে ছিল ২০০ টাকা। ভেবেছিলেন, ওই টাকায় কদিন চালিয়ে দেবেন। তার মধ্যে একটা কাজ ঠিক জুটে যাবে। কিন্তু, মুম্বাইয়ে, বান্দ্রা স্টেশনের বাইরে পা তখনও রাখেননি। পকেটের সম্বল ২০০ টাকা কেড়েকুড়ে নিয়ে চলে যায় ছিনতাইবাজরা।
অচেনা শহরে অসহায় প্রেম। কি করবেন? কোথায় যাবেন? কার কাছে হাত পাতবেন? অনিশ্চয়তার প্রশ্নভিড়ে চাপে পড়ে যান। প্রেমের চোখেমুখ ফুটে বেরোয় টেনশন। ভাষা সমস্যা চাপ আরও বাড়িয়ে তোলে। হিন্দি বোঝেন না, বলা তো দূর অস্ত। তাই, নিজের অবস্থা যে মুখ ফুটে কাউকে বলবেন, তাও বলতে পারছেন না।
বান্দ্রার বাইরে এক তামিল ভদ্রলোক প্রেমকে দেখে কিছু হয়তো আঁচ করেছিলেন। তিনিই প্রেমকে নিয়ে যান মন্দিরে। সেখানে ওই তামিল লোকটির আর্জি শুনে পুণ্যার্থীদের অনেকেই তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করেন। সেই টাকায় চেন্নাইয়ের টিকিটও কেটে দেন ভদ্রলোক। কিন্তু, প্রেম গণপথির বদ্ধমূল ধারণা, মুম্বাইয় পারে তার জীবনটাকে আমূল বদলে দিতে। তাই শেষ পর্যন্ত চেন্নাইয়ে না গিয়ে, একটু খোঁজাখুঁজি করে, মহিম বেকারিতে কাজ জুটিয়ে নেন।
বেতন মাসে মাত্র ১৫০ টাকা! যার সম্বল বলতে শূন্য, সে আর আপত্তি করবে কেন? শুরু করতে, সেটাই তখন অনেক। কাজের উদ্বৃত্ত সময়ে আরও কয়েকটা কাজ, কয়েকটা হোটেলে। যেখান থেকে যা পেয়েছেন, জমিয়েছেন। মাত্র দু-বছরের মধ্যে একটি নিজের ব্যবসাও শুরু করে দেন, ইডলির দোকান। ১৫০ টাকা দিয়ে একজন লোকও রাখেন। হাজার টাকা খরচ করে কিনে ফেলেন প্রয়োজনীয় চাটু, স্টোভ, হাতা, খুন্তি এবং আর যা-যা লাগে। সালটা ১৯৯২, ভাশি রেলস্টেশনের পাশে খুলে ফেলেন নিজের দোকান।
একটা সময় মনে হয় ব্যবসা বাড়াতে আরও কারও সাহায্য প্রয়োজন রয়েছে। মুম্বাইয়ে নিয়ে আসেন দুই ভাইকে। আরও কয়েক বছরের মধ্যে ৫ হাজার টাকা মাসে ভাড়া দিয়ে বড় দোকানও নিয়ে নেন। সেই সঙ্গে আরও কয়েক জন কর্মী। এ ভাবেই ব্যবসা বাড়িয়েছেন প্রেম। ফুটের ছোট দোকান এ ভাবেই হয়ে ওঠে প্রেমের রেস্তোরাঁ। একটা নয়, অনেক। ২০১২ সালের মধ্যেই ভারতের ২২ রাজ্যে ৪৫টি রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেন এই ব্যবসায়ী। নিউজিল্যান্ড, দবাইয়ের মতো জায়গাতেও রয়েছে তার আরও ৭টি রেস্তোরাঁ। শূন্য থেকে শুরু করে আজ আক্ষরিক অর্থেই তিনি ৩০ কোটির মালিক।
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এম.এস/একে