সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:২০:৩৪

ক্যানসার রুখতে জোলির অনুকরণে ভারতীয় নারীরা

ক্যানসার রুখতে জোলির অনুকরণে ভারতীয় নারীরা

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ক্যানসার মোকাবেলায় হলিউডের শীর্ষ নায়িকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির পথ অনুসরণ করছেন ভারতীয় নারীরা। তবে সেই পদ্ধতি কতটা যুক্তিসম্মত, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে চিকিৎসকদের।

হলিউড নায়িকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ক্যানসার এড়াতে শুধু স্তন নয়, বাদ দিয়েছেন নিজের ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবও। স্তন ক্যানসার ঘটাতে পারে এমন জিন (বিআরসিএ-১) খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর শরীরে। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এই ভাবে আগাম ডিম্বাশয় কেটে বাদ দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে কলকাতাতেও।

কিন্তু স্তন ক্যানসারে কেন ডিম্বাশয় বাদ দিতে হবে? কলকাতার চিকিৎসকদের একটি অংশের দাবি, স্তন ক্যানসারের জন্য ‘ইস্ট্রোজেন হরমোন’ এক ধরনের অনুঘটক। অর্থাৎ ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে। সেই ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের উৎস ডিম্বাশয় দু’টি কেটে বাদ দিলেই (যাকে উফারেক্টমি বলা হয়) ঝামেলা চুকে যায়।

তবে ক্যানসার প্রতিরোধে এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর তা নিয়ে চিকিৎকদের মধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ক্যানসার চিকিৎসকদেরই অন্য অংশ এর বিরোধী। তাঁরা বলছেন, ডিম্বাশয় বাদ দেওয়ার কোনও অর্থই হয় না। একটু সতর্কতা আর নিয়মিত পরীক্ষাতেই স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়।

ভারতের শহরাঞ্চলে মহিলারা যত রকম ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে স্তন ক্যানসারের হার সব চেয়ে বেশি। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর নতুন করে ১৪ হাজার মহিলার দেহে এই ক্যানসার পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু কলকাতার ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের শতকরা ৯৯ ভাগই মনে করেন, স্তন কেটে ক্যানসার আটকানো যায় না। যদি ক্যানসার-আক্রান্ত কোষকে উদ্দীপ্ত করার অন্য উপকরণ শরীরে মজুত থাকে তা হলে কাটা স্তনের জায়গার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র টিস্যু থেকেও ক্যানসার হতে পারে।

কলকাতার বেশ কিছু ক্যানসার চিকিৎসক বলছেন, উফারেক্টমি করে দু’টি ডিম্বাশয় বাদ দিলে মহিলাদের স্তন ক্যানসারের (বিশেষ করে যাঁদের শরীরে বিআরসিএ-১ বা ২ জিন রয়েছে) সম্ভাবনা অনেক কমানো যায়। চিকিৎসকদের হিসাবমতো কলকাতায় গত এক বছরে অন্তত ৯ জন মহিলা উফারেক্টমি করেছেন।

খড়দহের এক মহিলা সম্প্রতি তাঁর ডিম্বাশয় দু’টি বাদ দিয়েছেন। ওই মহিলার দেহে অ্যাঞ্জেলিনার মতোই বিআরসিএ-১ জিন মিলেছিল। তাঁর মায়েরও স্তন ক্যানসার হয়েছিল।

ভবিষ্যতে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে গত ৬ জুলাই পার্ক স্ট্রিটের বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়ে নিজের ডিম্বাশয় বাদ দিয়েছেন খড়দহের ৪৯ বছরের ওই বাসিন্দা। তিনি জানাচ্ছেন, অস্ত্রোপচারের পরে এখনও পর্যন্ত কোনও শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়নি।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবারের কারও স্তন ক্যানসার হলে তাঁর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনও মহিলাদের ১০ শতাংশের শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিতে সাহায্যকারী বিআরসিএ-১ এবং বিআরসিএ-২ জিন পাওয়া যায়।এঁদের যদি পরবর্তীকালে স্তন ক্যানসার হয় তা হলে সাধারণত সেই ক্যানসার কোষের মূল উদ্দীপকের ভূমিকা নেয় ইস্ট্রোজেন হরমোন।

খড়দহের ওই মহিলার অস্ত্রোপচার যিনি করেছেন সেই ক্যানসার চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ডিম্বাশয় বাদ গেলে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ আটকে যায়। ‘ইস্ট্রোজেন রিসেপটিভ পজিটিভ ক্যানসার’ও আগাম রুখে দেওয়া যায়। তাই যে সব মহিলার বিআরসিএ ১ বা ২ জিন মিলছে, তাঁদের আমরা ডিম্বাশয় বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ এঁদের ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা সব সময় বেশি।

স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ তাপ্তী সেনের মতে, মেনোপজ হয়ে গিয়েছে এমন মহিলাদের তুলনায় ঋতুস্রাব হচ্ছে এমন মেয়েদের শরীরে বিআরসিএ১ বা ২ জিন থাকলে ইস্ট্রোজেন রিসেপটিভ স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বেশি থাকে। এঁদেরই ডিম্বাশয় বাদ দেওয়া উচিত।

তাপ্তীদেবী বলেন, অস্ত্রোপচারের আগে ওই মহিলার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি তিনি সন্তান চান তা হলে দ্রুত সন্তানের জন্ম দিয়ে তার পর অস্ত্রোপচার করিয়ে নিলে ভাল।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অর্ণব গুপ্তও বলেছেন, ঝুঁকি নেওয়ার দরকার কী? বিআরসিএ১ বা ২ জিন কোনও মহিলার শরীরে থাকলে তাঁর ৮০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে ‘ইস্ট্রোজেন হরমোন রিসেপটার পজিটিভ ক্যানসার’ হওয়ার। তাই তাঁর ডিম্বাশয় বাদ দেওয়াই উচিত।

তবে গৌতম মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ সরকার কিংবা সুবীর গঙ্গোপাধ্যাদের মতে, স্তনের ক্যানসার বন্ধে অন্য অঙ্গহানি যে ঘটাতে হবে তার কোনও ভিত্তি নেই।

গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, শরীরে বিআ্ররসিএ১ বা ২ জিন থাকলে জীবদ্দশায় ক্যানসার হবেই এমন নয়। হলেও সেটা যে ইস্ট্রোজেন উদ্দীপনা নির্ভর হবে তা-ও নয়। তাই শুধু আশঙ্কা থেকে কেন অঙ্গ বাদ দেওয়া হবে?

তাঁর মতে, ঋতুচক্র হয় এমন মহিলারা ডিম্বাশয় বাদ দিলে শরীরে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর থেকে বরং নিয়মিত স্তন পরীক্ষা এবং বছরে একবার ম্যামোগ্রাফি করালে স্তন ক্যানসার অনেকটা রোখা যাবে।

একই মত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি বলছেন, ডিম্বাশয় বাদ না দিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিশেষ করে অল্পবয়সী মেয়েদের ডিম্বাশয় বাদ দেওয়া আমরা সমর্থন করি না।

সোমনাথ সরকারেরও মত, একটা আশঙ্কা থেকে খামখা অঙ্গ বাদ দেব কেন? স্তন বা ডিম্বাশয় ছাড়া অন্য অনেক অঙ্গের ক্যানসারেই এই রকম জিন থাকে। তা হলে কি সেই জিন পেলেই আগাম এক-একটা অঙ্গ বাদ দিতে হবে? সূত্র: আনন্দবাজার
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে