এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি বন্দুক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। দীর্ঘদিন ধরেই বন্দুক নিয়ন্ত্রণ করতে সামাজিক আন্দোলন চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র শিল্প বিস্তার লাভ করায় চাইলেও বন্দুক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে প্রতিমাসেই গুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটছে।
এতে যেমন প্রাণহানি ঘটছে তেমনি সাধারণ মানুষের মনে বিরাজ করছে এক ধরনের শঙ্কা। এই শঙ্কার কারণে দেশটির পুলিশ সদস্যরাও সন্দেহের বশে কারো উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে কার্পণ্য করে না।
এ তো গেল যুক্তরাষ্ট্রের কথা। এবার দেখা যাক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে, সেখানে কি ঘটছে। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ২০১৪ সালে নরওয়ে পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাত্র দুটি গুলি ছুড়েছিল। সেই গুলিতে কেউ নিহত ও আহত হয়নি। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে নরওয়েতে অপরাধের মাত্রা অনেক কম।
কিন্তু কট্টরপন্থী ব্রেভিকের হাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ার পর দেশটি পুলিশি নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বন্দুক রাখার ব্যাপারে নমনীয় অবস্থান নেয়। এ অবস্থার মধ্যেও যে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটেনি এটা অবাক করারই কথা।
এই সফলতার পেছনে খোদ নরওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছরই যাতে আগের বছরের তুলনায় বন্দুকের ব্যবহার কম করতে হয় সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে দেশটির পুলিশ কর্তৃপক্ষের। ২০১৪ সালে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাত্র ৪২ বার বন্দুক বের করেছিল।
গত ১২ বছরের মধ্যে এটাই ছিল দেশটির সবচেয়ে কম সংখ্যক বন্দুক বের করার রেকর্ড। নরওয়েতে গত ১২ বছরে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে মাত্র দুজন মানুষ।
ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডের পুলিশের মতো নরওয়ে পুলিশও প্রতিদিনের দায়িত্ব পালনের সময় বন্দুক সঙ্গে রাখে না। বিশেষ কোনো অপারেশনে গেলেই বন্দুক সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে সেখানে। এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে। সেখানকার পুলিশ সদস্যরা সর্বদা বন্দুক বহন করে থাকে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে পুলিশের হাতে ৫৪৭ জন মানুষ মারা গেছে। এদের মধ্যে ৫০৩ জনকেই নিকটবর্তী অবস্থান থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে নরওয়ের মতো পুলিশের হাতে অপরাধীদের নিহত হওয়ার সংখ্যা কম।
২০১৪ সালে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে মাত্র একজন গুরুতর আহত হয়েছিল। গত ২৪ বছরে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে যে ক’জন মানুষ নিহত হয়েছে তার তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ২৪ দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের গুলিতে ৫৯জন নিহত হয়।
নর্দান মিশিগান ইউনিভার্সিটের সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক অধ্যাপক দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, বর্ণবৈষম্য এবং গরিবদের সমস্যা না মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ বাহিনীকে সেনাবাহিনী বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নীতিগতভাবে বৈধতা দিচ্ছে। এটা কিন্তু অনুচিত।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের এই সহিংস আচরণের কারণে অপরাধীদের হাতেও তারা আহত ও নিহত হচ্ছেন। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অপরাধীদের হাতে ৩০ পুলিশ আহত হয়েছে। অন্যদিকে ২০১২ সালে অপরাধীর গুলিতে একজন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার আহত হয়েছিলেন।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে