এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: শুষ্ক মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তীব্র তাপদাহের কারণে মাঠ হয়ে যায় মরুভূমির মতো। চারিদিকে তাকালে শুধুই খা খা কোথাও পানির চিহ্ন নেই। বরেন্দ্র অঞ্চলে গত সাত দিনে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। অথচ নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের হলুদডাঙা মাঠে আকস্মিকভাবে দেখা মিলেছে এক অলৌলিক পানির ফোয়ারার।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকস্মিক ওই ঝর্ণাধারার আবিষ্কার করে স্থানীয় বাসিন্দারা। মাঠের একটি টিলা থেকে ওই ঝর্ণাধারায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে আশপাশের প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকায়।
পানি সঙ্কটের জনপদ নিয়ামতপুরে ঝর্ণাধারা এ আকস্মিক আবিষ্কার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আশির্বাদ হয়ে উঠেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসছে ঝর্ণাধারা দেখতে। কন্টেইনার বা বোতলে করে অনেকে সংগ্রহ করছে পানি।
অন্যদিকে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় ওই ঘটনাকে অলৌকিক দাবি করে শুরু করে দিয়েছ পূজা-অর্চনা। স্থানীয় রথিন্দ্রনাথ জানান, সকালে স্থানীয় মানুষ দেখেন যে টিলার কোল ঘেঁষে একটি জায়গা থেকে পানি উঠতেছে। ওই খবর আশেপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় আদিবাসীরা সকাল থেকেই সেখানে পূজা-আচর্না শুরু করে দিয়েছে।
রথিন্দ্রনাথ আরো জানান, আগামী এক সপ্তায় এ এলাকায় কোনো ভারি বৃষ্টিপাত হয় নি। তাছাড়াও বর্ষা মওসুমেও আশেপাশের এলাকায় পানির অভাবে ধান চাষ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। গরমের সময় এ এলাকার মানুষ চরম পানির সমস্যায় ভোগে। সে কারণে হঠাৎ এ ঘটনাকে স্থানীয় মানুষ সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ হিসেবেই ধরে নিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই এ পানি বোতলে ভরে নিয়ে যেতে শুরু করেছেন।
আরেক আদিবাসী সবুজ কুমার মণ্ডল জানান, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত মানুষ ভিড় করছে। বেশিরভাগ মানুষ হাতে বোতল নিয়ে অপেক্ষা করছেন পানি সংগ্রহ করার জন্য। শনিবার সকাল থেকে সেখানে তিনটি দোকান বসেছে।
স্থানীয়দের আরো কয়েকজন জানান, আশেপাশের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে নদী, খাড়ির মতো কোনো স্থানীয় পানির উৎস নেই ওই এলাকায়। যে স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে তার আশেপাশে গভীর নলকূপ বোরিং করা যায়নি। এ অঞ্চলে পানির স্তর ১২০ থেকে ১৩০ ফিটের মধ্যে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বায়ুর চাপ যদি পানির চাপের থেকে কমে যায় তাহলে ভূ-গর্ভস্থ পানি বের হয়। যতোক্ষণ পর্যন্ত বায়ুর চাপ পানির চাপের চেয়ে বেশি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মাটির নিচ থেকে পানি বের হবে।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়ামতপুর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, সাধারণত বায়ুর চাপ যখন পানির চাপের চেয়ে কম হয় তখন এমন ঘটনা ঘটে থাকে।
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে