এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : নির্মল হাওয়ায় নিরিবিলি পানিতে বসবাস- সেও কি সম্ভব! অনেকের কাছে হয়তো বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে। তবে হ্যাঁ, পানিতে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই রয়েছে নৌকায় বাস করা মানুষের উপস্থিতি৷ বিশ্বের আরো অনেক অঞ্চলে এ ধারণা এখন ছড়িয়ে পড়ছে৷
বাড়ন্ত সমুদ্রের মাঝেই জীবন যাপন : ডাচ নির্মাণ কৌশল বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ওয়াটার স্টুডিও ডট এনএল পানিতে ভাসমান অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরি করেছে৷ ডেলফ্ট এবং হেগের মধ্যে তৈরি এই কমপ্লেক্সে ৬০টি অ্যাপার্টমেন্ট থাকবে৷ ওয়াটার স্টুডিও ডট এনএল পানির উপরে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে বিশেষ পারদর্শী৷ তাছাড়া এটাতো অনেকই জানেন, নেদারল্যান্ডসের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে অবস্থিত৷
মানবকুলের প্রবেশ নিষেধ : ‘সমুদ্র বৃক্ষ’ ধারণার অংশ হিসেবে ভাসমান স্থাপনাটি তৈরি করেছে ওয়াটার স্টুডিও ডট এনএল৷ এটির বিভিন্ন লেয়ারে আলাদা আলাদাভাবে নানা প্রজাতির পাখি বসবাস করতে পারবে৷ তবে মানবকুলের সেখানে যাওয়া বারণ৷
ভাসমান মসজিদ : নেদারল্যান্ডসই বিশ্বের একমাত্র দেশ নয়, যারা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত৷ তাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য এই ভাসমান মসজিদটি তৈরি করেছেন ডাচ স্থপতিরা৷ মসজিদের উপরের কলামগুলো শুধু ভারসাম্যই রক্ষা করছে না, একইসঙ্গে মসজিদের ভেতরের দিকে আলোর যোগানও দিচ্ছে৷
উচ্চ প্রযুক্তির অবকাশ নন্দনকানন : সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে মালদ্বীপ৷ অনেক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই দ্বীপদেশটি পুরোটাই একসময় সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাবে৷ তবে পর্যটকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ ডাচ স্থপতিরা তৈরি করেছেন এই কৃত্রিম ‘গ্রিন স্টার’ দ্বীপ, যেখানে দ্বীপে অবকাশ যাপনের পুরো স্বাদই মিলবে৷
ফুলের শক্তি : মালদ্বীপের জন্য বড় ধরনের ফুলের স্থাপনাটি তৈরি করেছে ওয়াটার স্টুডিও ডট এনএল৷ এটির মধ্যে ১৮৫টি অভিজাত ভিলা রয়েছে৷ পাঁচটি এরই মধ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত৷
মনোরম দৃশ্য : সমুদ্রে ভাসমান একটি ভিলা। মালদ্বীপের মূল ভূখণ্ডের খুব কাছেই এগুলোর অবস্থান৷ পরিকল্পিত স্থাপনাটিতে দোকান, রেস্তোরাঁ এবং হোটেলও রয়েছে৷ অবশ্য মালদ্বীপের জন্য এগুলো অভিজাত কিছু নয়৷ বরং ভবিষ্যতে এরকম কাঠামো তাদের প্রয়োজন হবে টিকে থাকতে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে ২,০০০ দ্বীপ তলিয়ে যেতে পারে৷
হল্যান্ডের নৌকাবাড়ি : পানিতে বসবাসের এ ধারণা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ কৃত্রিম দ্বীপের ধারণা বহু আগে থেকেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার টেবিলে ছিল৷ তাছাড়া অনেক মানুষ আগে থেকেই পানিতে থাকছে৷ নেদারল্যান্ডসে নৌকাবাড়িতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়৷ সেদেশে নৌকাবাড়ির সংখ্যা ১০,০০০ হাজারের মতো, এগুলোর মধ্যে আড়াই হাজারের অবস্থান বিভিন্ন খালের মধ্যে৷
ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য : পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত দরিদ্র অঞ্চলের অনেক মানুষ বহু আগে থেকেই নৌকায় বাস করছে৷ কাশ্মীরে ২৫ বাই ৪০ মিটার আকারের এই নৌকাটি পর্যটকদের ভাড়া দেয়া হয়৷ একজন ইংরেজ শত বছর আগে নৌকায় বসবাসের ধারণা নিয়ে এগিয়েছিল, যখন তাকে জমি কিনতে দেয়া হয়নি৷ ভবিষ্যতে ভারত, বাংলাদেশে নৌকায় বসবাসের হার বেড়ে যেতে পারে৷ কেননা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতির মুখে রয়েছে এই দেশ দুটোও৷
হা লং বে’তে ভাসমান গ্রাম : ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত হা লং বে এলাকায় গেলে চোখে পড়বে এমন দৃশ্য৷ সেখানে ১,৬০০ মানুষ কাঠের তৈরি নৌকাবাড়িতে বসবাস করছে৷ হা লং বে’র অধিবাসীদের মূল আয়ের উৎস হচ্ছে মাছ ধরা, মুক্তা সংগ্রহ আর পর্যটন৷ এসব নৌকাবাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা মেটায় ডিজেল ইঞ্জিন৷
বিক্রির তালিকায় ইউরোপ : আরব উপদ্বীপ আরো বড় পর্যায়ে পানিতে বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে৷ দুবাইয়ে এরকম এক স্থাপনার নাম হচ্ছে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড’৷ সেখানে ২৭০টি দ্বীপকে পাঁচটি মহাদেশের আদলে সাজানো হয়েছে৷ এসব মহাদেশে সম্পত্তি কিনতে খরচ পড়বে ১১ থেকে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷