এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ছোট থেকেই আমি গণিতে খুব বেশি ভালো ছিলাম না। সবার লক্ষ্য থাকতো কীভাবে ৮০'র ঘরে নম্বর পাবে আর আমি ভাবতাম কীভাবে পাস করবো। পরীক্ষায় আসতে পারে সম্ভাব্য কয়েকটা অংক করেই আমি হলে যেতাম। টেনে-টুনে পেতাম ৩৩। যদিও অংকের ভয় একসময় আমার কেটে যায়। শুধু আমার স্কুল নয় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অধিকাংশ স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের ভেতর ৩৩ পেলেই পাস। নয়তো কপালে জোটে ফেল। স্কুল জীবনে ফেল বা পাস আমরা যাই করি না কেন, কখনো কি ভেবে দেখেছেন পাস করতে কেন ৩৩ নম্বরই পেতে হয়? কেন কম বা বেশি নয়?
শুধু আমাদের দেশেই নয় ভারত ও পাকিস্তানেও শিক্ষার্থীদের পাস করতে ৩৩ শতাংশ নম্বর প্রয়োজন। এই তিনটি দেশের কথা বলতেই খানিকটা অনুমান করা যায় পাস করতে ৩৩ শতাংশ মার্ক ব্রিটিশদের থেকে আরোপ করা থেকে এসেছে।
১৭৫৭ সালে ব্রিটিশরা নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে উপমহাদেশ দখল করে। এর ১০০ বছর পর ভারতের জনগণ স্বাধীনতা ফিরে পেতে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ আন্দোলন করে। তবে সিপাহি বিদ্রোহ দমন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বদলে সরাসরি ভারত শাসনের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশ প্রধান। এরপরের বছর অর্থাৎ, ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো উপমহাদেশে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালু হয়। কিন্তু পাস কত নম্বরে হবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। পরামর্শের জন্য দ্বারস্থ হন ব্রিটিশদের কাছে। ব্রিটেনে তখন ১০০ তে ৬৫ নম্বরে পাস ছিল।
এদিকে ব্রিটিশ লর্ডরা ভাবতেন, উপমহাদেশের লোকের জ্ঞান-বুদ্ধির মাত্রা ব্রিটিশদের তুলনায় অনেক কম। তাদের প্রচলিত কথা মতে, ‘দ্য পিপল অব সুবকন্টিনেন্ট অর হাফ এস ইন্টেলেকচুয়াল অ্যান্ড এফিসিয়েন্ট এস কম্পারেড টু দ্য ব্রিটিশ’ অর্থাৎ বুদ্ধি ও দক্ষতায় উপমহাদেশের মানুষকে ইংরেজদের তুলনায় অর্ধেক। তাই পাসমার্ক হবে ৬৫ এর অর্ধেক ৩২.৫। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত কিন্তু পাস নম্বর ৩২.৫ ছিল। ১৮৬২ সালে তা গণনার সুবিধার্থে বৃদ্ধি করে ৩৩ করা হয়। সেই থেকে এই ৩৩ নম্বরই পাসমার্ক হিসেবে বিবেচিত হয়।
আজ এতো বছর পরেও ইংরেজদের করা সেই নিয়ম আমরা অনুসরণ করছি। তবে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয় আমাদের উপমহাদেশের অনেক কিছু এখনো ব্রিটিশদের করে যাওয়া নিয়মেই চলছে। এর মধ্যে এখনো পাস মার্ক ৩৩ আছে।