শনিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৯:২৬:৪৩

বিয়ের বায়োডাটা তৈরি করবেন যেভাবে

বিয়ের বায়োডাটা তৈরি করবেন যেভাবে

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সিভি বা বায়োডাটা শব্দগুলো কানে ভেসে আসলে প্রথমে যেটি মনে পড়বে তা হলো চাকরি। সাধারণ চাকরি সংক্রান্ত ক্ষেত্রেই সিভি বা বায়োডাটার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিয়ের ব্যাপারে প্রাথমিক পর্যায়ে বর-কনে সম্পর্কে জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই বায়োডাটা।

মূলত একে অপরকে জানার জন্য বায়োডাটার প্রয়োজন। এতে বর-কনের পরিবার সম্পর্কেও জানা যায়। এরপরই বিয়ের কথাবার্তা নিয়ে এগোতে থাকে বর-কনের অভিভাবকরা। কিন্তু বিয়ের বায়োডাটা কী, কীভাবে তৈরি করতে হয়—এসব অনেকেই জানেন না। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এ ব্যাপারে বিয়ে ও সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শক হুরায়রা শিশির কথা বলেছেন।

বিয়ের বায়োডাটা : বিয়ের ক্ষেত্রে বায়োডাটা তৈরি করলে তা এমনভাবে করতে হবে, যেখানে বিয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য উল্লেখ থাকে। যেমন বর বা কনের সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থা যেন সুস্পষ্টভাবে থাকে। বর বা কনের জীবনযাপন, চিন্তাধারা, সামাজিক মর্যাদা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে জানা যায়।

বায়োডাটায় বর বা কনের ছবি রাখতে হবে। তবে ছবিটি হতে হবে ফরমালি তোলা ইনফরমাল ছবি। ছবিটি সেলফি হবে না, আবার পাসপোর্টের মতো গুরুগম্ভীরও নয়, এ ধরনের ছবি যুক্ত করতে হবে। যেখানে ব্যক্তি আপনাকে তুলে ধরা হবে। যে ছবিটি বিপরীত পক্ষের মানুষজন দেখতে পারবেন। ছবি তোলার সময় মনে রাখতে হবে, বিপরীত পক্ষের কাছে আপনার ছবিই আপনার সম্পর্কে মনোভাব তৈরি করবে, সেটা হতে পারি নেতিবাচক কিংবা ইতিবাচক। তাই ইতিবাচক মনোভাব তৈরির জন্য ছবির দিকে সতর্কতা অবলম্বন ও গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

ছবির ক্ষেত্রে বিশেষ করে মেয়েরা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের বাইরে গিয়ে একটু বেশিই সামাজিকতা উপস্থাপন করতে চান। যা কখনোই করা উচিত নয়। আপনি যদি নিয়মিত হাতাকাটা ব্লাউজ বা পোশাক পরেন কিংবা এমন পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য হন, তাহলে বায়োডাটায় এমন ছবিই যুক্ত করুন। ফলে বিয়ের পর ছবির সঙ্গে আপনার বাস্তবজীবনের অমিল হবে না। আপনি যদি ঘুরতে, বই পড়তে কিংবা সিনেমা দেখতে পছন্দ না করেন, তাহলে এসব উল্লেখ না করাই উচিত। আর বায়োডাটা যদি ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠান তাহলে সম্ভব হলে সঙ্গে একটি ভিডিও ক্লিপও দিতে পারেন।

এদিকে অনেক পরিবার ধর্মীয় বিধান পালনে বেশ কঠোর থাকেন। এমন পরিবার ধর্মের বিষয়টি নিখুঁতভাবে ইঙ্গিত করতে পারেন বায়োডাটায়। ছবিতেও সেটা স্পষ্ট রাখতে হয়। আবার কোনো পরিবার সাধারণ হলে বিপরীত পক্ষ অতি-আধুনিক হলে তা বায়োডাটা দেখে বুঝতে পারলে সম্পর্কে জড়ানো—না জড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় দুই পরিবারের।

বায়োডাটায় কোনো কিছু গোপন রাখতে হয় না। আপনি যদি কিছু গোপন রাখেন আর বিয়ের পর সেটি খুবই খারাপভাবে প্রকাশ্যে আসলো, তাহলে দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত কিংবা কলহের হতে পারে। এ জন্য বায়োডাটায় সব তথ্য স্পষ্টভাবে এবং প্রকৃত সত্য উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ।

বায়োডাটায় যেসব বিষয় আবশ্যিক : কিছু কিছু বিষয়ে রয়েছে যা বায়োডাটায় আপনাকে রাখতেই হবে। বর বা কনের ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে পূর্ণ নাম, প্রকৃত জন্ম সাল, রক্তের গ্রুপ, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, উচ্চতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা। বর্তমান ঠিকানা ভাড়া বাসা না নিজস্ব তা উল্লেখ রাখা। ফোন নম্বর ও ই-মেইল ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় থাকলে এসবের প্রোফাইল লিংক যুক্ত করতে পারেন।

পারিবারিক তথ্যে মা-বাবা ও ভাই-বোনের নাম, পেশা, বিবাহিত না অবিবাহিত তা লিখবেন। ভাই-বোন বিবাহিত হলে তাদের সঙ্গী সম্পর্কেও লিখতে পারেন। দাদা-দাদি ও নানা-নানি থাকলে তাদের সম্পর্কেও লিখতে পারেন। আর একক পরিবার, না যৌথ পরিবার সেটিও রাখতে পারেন বায়োডাটায়।

চাকরিজীবী হলে প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নাম-ঠিকানা, নিজের বিভাগ ও পদবি উল্লেখ করা, শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির নাম, পাস ইয়ার লিখবেন। বিপরীত পক্ষ যেন সহজেই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ পরিবারের কোনো সদস্যের শিক্ষা এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থার বিষয় স্পষ্ট করতে চান না বা এড়িয়ে যান। এমনটা না করে সততার সঙ্গে প্রকৃত বিষয় উল্লেখ করা উচিত। এতে বায়োডাটা দেখার পর কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে যাবতীয় সব খোলামেলা আলোচনা করে এগিয়ে যেতে পারেন।

প্রতিটি মানুষের জীবনে বিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বায়োডাটা দেখে পাত্র-পাত্রী পছন্দ হলে তাড়াহুড়ো করে বিয়ের আয়োজন করেন অনেকে। তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে কথাবার্তা এগিয়ে নেয়া উচিত। আর মাঝের সময়ে পরিবার এবং বর বা কনে সম্পর্কে খোঁজ নেয়া উচিত। এতে সবকিছু যদি ইতিবাচক মনে হয় তবেই বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে পারেন। মনে রাখতে হবে, বিয়ে একটি সুন্দর, পবিত্র ও দীর্ঘস্থায়ী একটি সম্পর্ক। তাই সব ভেবে সিদ্ধান্ত নিন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে